Featured
- Get link
- X
- Other Apps
শিক্ষিত আর সম্মানিত হওয়া কি এক বিষয়?
একজন মানুষ শিক্ষিত হওয়া আর সম্মানিত হওয়া কখনো এক জিনিস হতে পারে না,কিন্তু শিক্ষা ও সম্মান দুটিই আমাদের জীবনে খুব গুরুত্বপূর্ণ গুণ, শিক্ষা জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে হয়ে থাকে,আর সম্মানিত হতে হলে অর্জন জ্ঞানের পাশাপাশি নীতি-নৈতিকতা, আদর্শ ও সৎ চরিত্রবান হতে হয়।অর্থাৎ শিখা জ্ঞানটাকে কাজে লাগাতে হয়,
আমাদের সমাজের মধ্যে অনেক শিক্ষিত লোক আছে,যারা উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত ও গোল্ডেন প্রাপ্ত সার্টিফিকেট ও আছে এমন সকল ব্যক্তি কিন্তু সম্মানিত হয় না , অন্যদিকে আবার দেখা যাই অনেকে খুব বেশি শিক্ষিত এমন না কিন্তূ সমাজে তার সম্মান ও কদর অনেক বেশি, সে হিসেবে বুঝা যাই--- এই দুটির অভিন্ন হলে ও একটির সাথে ওপরটির সম্পর্ক রয়েছে।
কারণ ইসলামে জ্ঞান অর্জনকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, আর সম্মান সেহেতু শুধু জ্ঞানের হয়না, বরং ব্যক্তির চরিত্র,আচার-আচরণ, আল্লাহভীতি এবং সমাজে তার অবদানের ওপরও নির্ভর করে।
আর ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে, প্রকৃত সম্মান আসে -তাকওয়া (আল্লাহভীতি) ও সৎগুণাবলীর মাধ্যমে, শুধুমাত্র বিদ্যার মাধ্যমে নয়।
কোরআনের দৃষ্টিতে শিক্ষা ও সম্মান
*** শিক্ষার মর্যাদা:
আল্লাহ তাআলা বলেন—
يَرْفَعِ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا مِنكُمْ وَالَّذِينَ أُوتُوا الْعِلْمَ دَرَجَاتٍ
"আল্লাহ তোমাদের মধ্য থেকে যারা ঈমান এনেছে এবং যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে, তাদের মর্যাদা উন্নীত করবেন।"
(সূরা আল-মুজাদালাহ: ১১)
এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, শিক্ষা (ইলম) মানুষের মর্যাদা বৃদ্ধি করে, তবে সেটি যদি ঈমান ও আমলের সঙ্গে হয়। কোন কিছু স্বীকার করে সে জিনিসটাকে আমল না করে ফেলে দেওয়ার মাধ্যমে কখনো সম্মানিত হওয়া যায় না, যেমন একজন মুসলমানকে সম্মান করতে হয় জানি তবে যদি সম্মান না করি সে জানার কোন মূল্য থাকে না, একজন মুসলমান অপর মুসলমান ভাইকে গালি দেওয়া কবীরাহ গুনাহ কিন্তু তারপরও গালি দেই,
••কোন মুসলিমকে গালি বা যে কোনভাবে কষ্ট দেয়া আরেকটি কবীরা গুনাহ্। যদিও সে লোকটি মৃত হোক না কেন।
আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:
وَالَّذِيْنَ يُؤْذُوْنَ الْـمُؤْمِنِيْنَ وَالْـمُؤْمِنَاتِ بِغَيْرِ مَا اكْتَسَبُوْا فَقَدِ احْتَمَلُوْا بُهْتَانًا وَّإِثْمًا مُّبِيْنًا
‘‘যারা মু’মিন পুরুষ ও মহিলাদেরকে কোন অপরাধ ছাড়াই কষ্ট দেয় তারা অপবাদ ও সুপষ্ট গুনাহ্’র বোঝা বহন করে’’। (আহযাব : ৫৮)
••আব্দুল্লাহ্ বিন্ মাস্’ঊদ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
سِبَابُ الْـمُسْلِمِ فُسُوْقٌ وَقِتَالُهُ كُفْرٌ.
‘‘কোন মুসলিমকে গালি দেয়া ফাসিকী এবং হত্যা করা কুফরি’’। (বুখারী ৬০৪৪, ৭০৭৬; মুসলিম ৬৪)
‘আয়িশা (রাযিয়াল্লাহু আন্হা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
لَا تَسُبُّوْا الْأَمْوَاتَ، فَإِنَّهُمْ قَدْ أَفْضَوْا إِلَى مَا قَدَّمُوْا.
‘‘তোমরা মৃতদেরকে গালি দিও না। কারণ, তারা দুনিয়াতে যা করেছে তার ফলাফল তো এমনিতেই ভোগ করবে’’। (বুখারী ১৩৯৩, ৬৫১৬)
তাই আমাদের চলাফেরার মাঝে এমন অনেক ব্যক্তি আছে যাদেরকে আমরা পছন্দ করতাম না, কিন্তু তারা এখন দুনিয়াতে নেই, তারপরও মাঝে মাঝে তাদের কথা উঠলে আমাদের মাঝে রাগ হয়, তাদের প্রতি অভিযোগগুলো আমরা আবারো রিপিট করতে থাকে, যদিও এটা ঠিক না কারণ তার পাপের শাস্তি হিসেবে ভোগ করবে,। আবার এমন অনেক মানুষআছে যারা অন্যের অনিষ্ট করতে বা তাকে কষ্ট দিতে ও এমনি এমনি জগড়া করার জন্য খারাপ আচরণ করে যে মানুষকে সে সহ্য করতে পারে না বা পছন্দ করে না, তার সামনে তাই অন্যরা সাধ্যমতো তার থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করে। এমন মানুষরা আল্লাহ্ তা‘আলার নিকটও সর্ব নিকৃষ্ট।
‘আয়িশা (রাযিয়াল্লাহু আন্হা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
إِنَّ شَرَّ النَّاسِ عِنْدَ اللهِ مَنْزِلَةً يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَنْ تَرَكَهُ النَّاسُ اتِّقَاءَ شَرِّهِ.
‘‘নিশ্চয়ই কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট সর্ব নিকৃষ্ট ব্যক্তি সে যাকে অন্যরা পরিত্যাগ করে তার অনিষ্ট থেকে বাঁচার জন্যে’’।
(বুখারী ৬০৩২; মুসলিম ২৫৯১)
তাই একজন মুসলিম অন্য মুসলিমের ভাই। সুতরাং সে তার ওপর ভাইয়ের উপর যেনো যুলুম না করতে, তার অসহযোগিতা না করে,এবং কখনো নীচু না ভাবে।
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
الْـمُسْلِمُ أَخُوْ الْـمُسْلِمِ، لَا يَظْلِمُهُ، وَلَا يَخْذُلُهُ، وَلَا يَحْقِرُهُ.. بِحَسْبِ امْرِئٍ مِنَ الشَّرِّ أَنْ يَّحْقِرَ أَخَاهُ الْـمُسْلِمَ، كُلُّ الْـمُسْلِمِ عَلَى الْـمُسْلِمِ حَرَامٌ دَمُهُ وَمَالُهُ وَعِرْضُهُ.
‘‘একজন মুসলিম অন্য মুসলিমের ভাই। সুতরাং সে তার উপর যুলুম করতে পারে না, তার অসহযোগিতা করতে পারে না এবং তাকে নীচও ভাবতে পারে না। একজন ব্যক্তির নিকৃষ্ট প্রমাণিত হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে তার অন্য মুসলিম ভাইকে নীচ বলে মনে করবে। একজন মুসলিমের উপর অন্য মুসলিমের রক্ত, সম্পদ ও ইয্যত হারাম। সে তা কোনভাবেই হনন বা ক্ষুণ্ণ করতে পারে না’’। (মুসলিম ২৫৬৪)
** সম্মানের মূল উৎস হলো তাকওয়া:
আল্লাহ তাআলা আরও বলেন—
إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِندَ اللَّهِ أَتْقَاكُمْ
"নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে সর্বাধিক সম্মানিত সে, যে সর্বাধিক আল্লাহভীরু।"
(সূরা আল-হুজরাত: ১৩)
এই আয়াত থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে, সম্মান নির্ভর করে তাকওয়ার ওপর, শুধু মাত্র শিক্ষা দ্বারা সম্মান অর্জন করা যাবে না।
**হাদিসের দৃষ্টিতে শিক্ষা ও সম্মান..
১. শিক্ষার ফজিলত:
রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন—
مَن سَلَكَ طَرِيقًا يَلْتَمِسُ فِيهِ عِلْمًا سَهَّلَ اللَّهُ لَهُ بِهِ طَرِيقًا إِلَى الجَنَّةِ
"যে ব্যক্তি জ্ঞান অর্জনের পথে বের হয়, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের পথ সহজ করে দেন।"
(মুসলিম, হাদিস: ২৬৯৯)
••তাকওয়াধারী ব্যক্তির মর্যাদা:
রাসুলুল্লাহ ﷺ আরও বলেন—
إِنَّ اللَّهَ لَا يَنْظُرُ إِلَى صُوَرِكُمْ وَأَمْوَالِكُمْ وَلَكِنْ يَنْظُرُ إِلَى قُلُوبِكُمْ وَأَعْمَالِكُمْ
"নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের চেহারা ও সম্পদের দিকে তাকান না, বরং তিনি তোমাদের অন্তর ও কর্মের দিকে তাকান।"
(মুসলিম, হাদিস: ২৫৬৪)
এই হাদিস থেকে বোঝা যায়, শুধুমাত্র শিক্ষিত হওয়া সম্মানের মাপকাঠি নয়, বরং অন্তরের বিশুদ্ধতা ও আমলই মূল বিষয়।
শিক্ষা ও সম্মানের মধ্যে পার্থক্য হলে -
••শিক্ষিত হওয়া জ্ঞানের প্রাপ্তি, আর সম্মানিত হওয়া চরিত্রের মাঝে উন্নতি।
••শিক্ষা অর্জন করলেই সম্মান পাওয়া যাবে এমন নয়, বরং আমল ও তাকওয়া সাথে থাকলেই প্রকৃত সম্মান অর্জিত হয়।
••অন্যায়ভাবে অর্জিত শিক্ষা বা জ্ঞান মানুষকে সম্মানিত না-করে লাঞ্ছিতও করতে পারে...
(যেমন ফিরআউন ও কারুনের উদাহরণ)।
ইসলাম শিক্ষা অর্জনের প্রতি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছে, কিন্তু প্রকৃত সম্মান কেবল শিক্ষার মাধ্যমে আসে না, বরং তাকওয়া, সৎকর্ম ও চরিত্রের গুণাবলীর মাধ্যমে আসে। তাই শুধু শিক্ষিত হওয়া যথেষ্ট নয়, বরং সেই জ্ঞানকে আমলের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করাই গুরুত্বপূর্ণ।
কোরআনে বলা হয়েছে, "যে জানে আর যে জানে না, তারা কি সমান হতে পারে?"
(সূরা যুমার, আয়াত ৯)।
এ আয়াতে জ্ঞানকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, কিন্তু সম্মান নির্ভর করে জ্ঞানের সঠিক প্রয়োগ ও আল্লাহভীতির উপর।
তাই আমাদেরকে শিক্ষিত হওয়ার পাশাপাশি সম্মানিত হতে হবে, আর সম্মানিত হতে গেলে শিক্ষাকে কাজে লাগাতে হবে, শুধু শিক্ষাটাকে বইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে সেই শিক্ষা দিয়ে কখনো আমরা উন্নত হতে পারব না বা কখনো সম্মানিত হতেও পারবো না, তাই শিক্ষা ও উভয়টা কাজে লাগিয়ে সুন্দর একটা সমাজ তৈরি করার জন্য আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে, এবং সেই সাথে অন্যকে ও আহবান করতে হবে।
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে বোঝার এবং আমল করার সুযোগ এবং তাওফিক ও উভয়টা দান করুন। আমীন....
- Get link
- X
- Other Apps
Popular Posts
- Get link
- X
- Other Apps
চাঁদ রাতের গুরুত্ব ও তার গুনাগুন সম্পর্কে আলোচনা।
- Get link
- X
- Other Apps
Comments
Post a Comment