শাওয়াল মাসের ছয় রোজা ও তার ফজিলত সমূহ। শাওয়াল মাসের রোজা সম্পর্কে মানুষের কিছু ভুল ধারণা, ও মহিলাদের জন্য শাওয়াল মাসের ৬রোজার হিসেবে কিভাবে করা হয়? ভাঙটি রোজা সহ গণনা করা হয় নাকি ভাংতি রোজা ছাড়া!

                      ২৭-০৪-২০২৫ 

                      বেহেস্তপতি বার 

                     সকাল ৫:৫০

عَن أَبي أَيُّوبَ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «مَنْ صَامَ رَمَضَانَ ثُمَّ أَتْبَعَهُ سِتّاً مِنْ شَوَّالٍ، كَانَ كَصِيَامِ الدَّهْرِ». رواه مسلم 


আবূ আইয়ূব আনসারী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি রমযানের রোজা পালনের পর শওয়াল মাসের ছয়দিন রোজা রাখল, সে যেন সারা বছর রোজা রাখল।” (মুসলিম)

 [মুসলিম ১১৬৪, তিরমিযি ৭৫৯, আবু দাউদ ২৪৩৩, ইবন মাজাহ ১৭১৬, আহমদ ২৩০২২, ২৩০৪৪, দারেমি ১৭৫৪]


পবিত্র রমজানের মাস অতিবাহিত হওয়ার পরেই আমরা উপনীত হয় শাওয়াল মাসে। পবিত্র রমজান মাসে যারা সিয়াম আদায় করেছেন, শাওয়াল মাসেও তারা ছয়টি নফল রোজা রাখবেন কষ্ট হলেও কারণ এই ৬টা রোয়া রাখলেই আপনি পেয়ে যাবেন সারাবছর রোজা রাখার সওয়াব। 

***এ ছয়টি রোজা রাখা আমাদের জন্য কি?

শরিয়তের দৃষ্টিতে শাওয়াল মাসে ছয় রোজা রাখা মুস্তাহাব।

 রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজানের রোজা রাখল, অতঃপর তার সঙ্গে সঙ্গে শাওয়াল মাসের ছয়টি রোজা রাখল, সে যেন পূর্ণ বছরই রোজা রাখল।

                  (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১১৬৪)


এক বছরের সমান হয় যেভাবে হয় :--

মুহাদ্দিসরা ছয় রোজাকে যেভাবে ব্যাখ্যা করে বলেন:---

আল্লাহ তাআলা বলেন ‘কেউ কোনো সৎ কাজ করলে সে তার ১০ গুণ সওয়াব পাবে এবং কেউ কোনো অসৎ কাজ করলে তাকে শুধু তারই প্রতিদান দেওয়া হবে।

                      (সুরা : আনআম, আয়াত : ১৬)


مَن جَآءَ بِٱلْحَسَنَةِ فَلَهُۥ عَشْرُ أَمْثَالِهَا ۖ وَمَن جَآءَ بِٱلسَّيِّئَةِ فَلَا يُجْزَىٰٓ إِلَّا مِثْلَهَا وَهُمْ لَا يُظْلَمُونَ ١٦٠

(১৬০.) কেউ কোন সৎকাজ করলে সে তার দশ গুণ পাবে। আর কেউ কোন অসৎ কাজ করলে তাকে শুধু তার অনুরূপ প্রতিফলই দেয়া হবে এবং তাদের প্রতি যুলুম করা হবে না।

 •• এ আয়াতে আখেরাতের প্রতিদান ও শাস্তির একটি সহৃদয় বিধি বর্ণিত হয়েছে যে, যে ব্যক্তি একটি সৎকাজ করবে, তাকে দশগুণ প্রতিদান দেয়া হবে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি একটি গোনাহ করবে, তাকে শুধু একটি গোনাহর সমান বদলা দেয়া হবে। 

হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তোমাদের প্রতিপালক অত্যন্ত দয়ালু। যে ব্যক্তি কোন সৎকাজের শুধু ইচ্ছা করে, তার জন্য একটি নেকী লেখা হয়- ইচ্ছাকে কার্যে পরিণত করুক বা না করুক। অতঃপর যখন সে সৎকাজটি সম্পাদন করে, তখন তার আমলনামায় দশটি নেকী লেখা হয়। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি কোন পাপ কাজের ইচ্ছা করে, অতঃপর তা কার্যে পরিণত না করে, তার আমলনামায়ও একটি নেকী লেখা হয়। অতঃপর যদি সে ইচ্ছাকে কার্যে পরিণত করে, তবে একটি গোনাহ লেখা হয়। কিংবা একেও মিটিয়ে দেয়া হয়। এহেন দয়া ও অনুকম্পা সত্বেও আল্লাহর দরবারে ঐ ব্যক্তিই ধ্বংস হতে পারে, যে ধ্বংস হতেই দৃঢসংকল্প।

 [বুখারী: ৬৪৯১; মুসলিম: ১৩১]


*** এই হিসাবে করলে রমজানের ৩০ রোজায় ৩০০ রোজার সওয়াব হয়। আর শাওয়ালের ছয় রোজায় ৬০ রোজার সওয়াব হয়। 

এভাবে রমজানের ৩০ রোজা ও শাওয়ালের ছয় রোজাকে একত্রিত করলে মোট ৩৬০ রোজার সমপরিমাণ হয়। এই হিসেবে তার একবছর হয়ে যাবে বলে ধরা হয়।

***মহিলাদের ক্ষেত্রে আরো কিছু বিষয় খিয়াল রাখতে হবে, যেমন :-----

•• যে সমস্ত মহিলারা হাযেয়  বা অন্যকোনো অসুস্থতার কারণ এ  রমজানের রোজা রাখতে পারেননি তারা আগে সেই কাজা রোয়া আদায় করে নিবেন।

তারপর শাওয়ালের নফল ছয়টা রোজা রাখা।

আর যারা পবিত্র রমজানব্যাপী সিয়াম সাধনা করেছেন এরপর শাওয়াল মাসে ছয়টি নফল রোজা রাখবে তাহলেই মিলবে সারাবছর রোজা রাখার সওয়াব। 

•• এ ছয়টি রোজা রাখা কি সুন্নাত নাকি মুস্তাহাব!

শাওয়াল মাসের এই ৬ রোজা হলো মুস্তাহাব।

 রমজানের এক মাসের দশগুণ হলো ১০ মাস আর শাওয়াল মাসের ছয়দিনের দশগুণ হলো ৬০ দিন অর্থাৎ দুইমাস। সুতরাং ৩৬টি রোজায় সারা বছর রোজা রাখার সওয়াব পাওয়া যায়।


*** শাওয়াল মাস বিষয়ক কিছু জাল হাদীস

•• ৬ রোযা ও অন্যান্য ফযীলতসমূহ।

এ সকল বানোয়াট কথার মধ্যে রয়েছে: 

‘‘হাদীস শরীফে আছে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ফরমাইয়াছেন : যেই ব্যক্তি শাওয়াল মাসে নিজেকে গুনাহের কার্য হইতে বিরত রাখিতে সক্ষম হইবে আল্লাহ তা‘আলা তাহাকে বেহেশতের মধ্যে মনোরম বালাখানা দান করিবেন। 

••;অন্য এক হাদীসে বর্ণিত হইয়াছে, হযরত রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এরশাদ করিয়াছেন, যেই ব্যক্তি শাওয়াল মাসের প্রথম রাত্রিতে বা দিনে দুই রাকয়াতের নিয়তে চার রাকয়াত নামায আদায় করিবে এবং উহার প্রতি রাকয়াতে সূরা ফাতিহার পর ২১ বার করিয়া সূরা ইখলাছ পাঠ করিবে; করুণাময় আল্লাহ তা‘আলা তাহার জন্য জাহান্নামের ৭টি দরজা বন্ধ করিয়া দিবেন এবং জান্নাতের ৮টি দরজা উন্মুক্ত করিয়া দিবেন। আর মৃত্যুর পূর্বে সে তাহার বেহেশতের নির্দিষ্ট স্থান দর্শন করিয়া লইবে।... 

•• অন্য আর এক হাদীসে বর্ণিত আছে, হযরত রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ফরমাইয়াছেন, যে ব্যক্তি শাওয়াল মাসে মৃত্যুবরণ করিবে সে ব্যক্তি শহীদানের মর্যাদায় ভূষিত হইবে।...’’


এ সবই হাদীসের নামে কথিত বানোয়াট ও ভিত্তিহীন কথা।

আর অনেকে তো ধারণা করে ও মনমতো মানার চেষ্টা করে ইসলামকে বা রোয়া রাখাকে যেমন অনেক বলে থাকে ৬রোয়ারাখার নির্দিষ্ট কোনো বিধান আছে সকলের জন্য শাওয়ালের (৬রোজা )

রোয়া আসেনি বা এই রোজা রাখলে কারোকে কিছু বলতে পারেনা, খুব পবিত্র হয়ে থাকতে হয়, খুব বেশি আমল এর মাঝে থাকতে হয় ইত্যাদি।

কিন্তু তারা এটাই ভুলে গেছে যে শুধু এই মানা না মানা বিষয় গুলো শুধু ৬রোজার জন্য নির্দিষ্ট করে আসেনি,সকল রোজার শর্ত ছিলো এমন যে যখন বান্দা রোজা রাখবে তখন সে অশ্লীল ও খারাপ বিষয় থেকে নিজেকে বিরত রাখবেন।

কিন্তু আমারা নিজেদের ভুলের কারণে ফরজ মুস্তাহাব সকল রোজার আলাদা আলাদা গুন মনে করে থাকি আর সেটা রোজার  রাখার মধ্যে মনে করে থাকি। সেটা আমাদের ভুলে ধারণা।


*** শাওয়াল মাসে ৬টি সিয়ামের ফযীলত সহীহ হাদীসের আলোকে আমরা জেনেছি। এ বিষয়ে অতিরঞ্জিত অনেক জাল কথাও প্রচলন করা হয়েছে। যেমন: ---

‘হযরত রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ফরমাইয়াছেন, যেই ব্যক্তি শাওয়াল মাসে ছয়টি রোজা রাখিবে, আল্লাহ তায়ালা তাহাকে শাস্তির শৃংখল ও কঠোর জিঞ্জিরের আবেষ্টনী হইতে নাজাত দিবেন..।

•• অন্য এক হাদীসে বর্ণিত হইয়াছে, হযরত রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ফরমাইয়াছেন, যেই ব্যক্তি শাউয়াল মাসের ৬টি রোজা রাখিবে, তাহার আমলনামায় প্রত্যেক রোজার পরিবর্তে সহস্র রোজার সাওয়াব লিখা হইবে।’’... ‘

•• •‘রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ...যে ব্যক্তি শাওয়াল মাসে রোজা রাখেন আল্লাহ পাক তার জন্য দোজখের আগুন হারাম করে দেন।...যে ব্যক্তি শাওয়াল মাসে ছয়টি রোজা রাখে, আল্লা-তায়ালা তার আমল নামায় সমস্ত মুহাম্মদী নেককার লোকের সাওয়াব লিখেন এবং সে হযরত সিদ্দিক আকবার (রা)-এর সঙ্গে বেহেস্তে স্থান পাবে।...যে ব্যক্তি শাওয়াল মাসে রোজা রাখে আল্লাহ তায়ালা তাকে লাল-ইয়াকুত পাথরের বাড়ী দান করবেন এবং প্রত্যেক বাড়ীর সম্মুখে দুধ ও মধুর নহর প্রবাহিত হতে থাকবে। ফেরেশতারা তাকে আসমান হতে ডেকে বলবেন, হে আল্লাহর খাস-বান্দা, আল্লাহ তোমাকে মাফ করে দিয়েছেন। শাওয়াল মাসে লূতের (আঃ) কওম ধ্বংস হয়েছিল, নূহের (আঃ)কওম ডুবেছিল, হুদের (আঃ) কওম ধ্বংস হয়েছিল....’’


এরূপ অসংখ্য মিথ্যা কথা দুঃসাহসের সাথে নিঃসঙ্কোচে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নামে বলা হয়েছে। আমাদের সম্মানিত লেখকগণ বা যারা যে মাধ্যমে লিখা লিখির কাজ করে যাচ্ছে মানুষের কল্যাণ এর জন্য তাদেরকে উচিৎ আরো একটুও চিন্তা ও যাচাই না করেই সেগুলো পোস্ট করা যাতে করে সকলে সঠিকটা জানতে পারে।

আর এখন সেহেতু শাওয়াল মাস চলতেছে এখনো যারা এই ৬টা রোয়া রাখিনি, এতো ফজিলত জানার পর কারো উচিৎ না এই ফজিলত হাত ছাড়া কারা এখনও মাস শেষ হয়ে যায়নি কষ্ট করে হলেও ৬টা রোজা রেখে ৩০রোজার সাথে মিলিয়ে এই ছাওয়াবটাকে নিজের জন্য কিয়ামত এর দিনের মুক্তির হাতিয়ার বানিয়ে নেন।


 আমাদের জেনে বুঝে সঠিক আমল করার তোফিকদান করুণ আমীন।































Comments