মা দিবস কি..? কোনো মুসলিম পরিবারের জন্য কি এই মা দিবস পালন করার নিয়ম আছে..?
"মা" এই শব্দটা কেবল একটাই, এর সাথে হয় না কোন কিছুর তুলনা, পৃথিবীতে সবকিছুর উপরে এই শব্দটা সেটা হলো মা।
মা এমন একটা শব্দ যে পৃথিবীতে সব জায়গায় একটা মানুষের জন্য বন্ধ থাকলে বা সকলেই একটা মানুষকে খারাপ বললেও এই মা কখনো তার সন্তানকে খারাপ বলে না।
আমাদের জীবনের প্রথম সঙ্গী হলেন আমাদের মা, আমাদের জীবনের প্রতিটি বিশেষ বিশেষ কাজ ও জীবনের প্রথম ঝুঁকিগুলোর পাশে থাকেন "মা" সেই ঝুঁকিটার মাধ্যমে আমরা সকল হতে পারি বা না পারি ক্ষীতি হোক বা লাভ, কোনটাতেই মা হাত ছাড়ে না তার সন্তান এর।
জীবনের প্রত্যেটা সফলতার সাথেই আছে একজন মায়ের নিঃস্বার্থ ত্যাগ আর অগাধ স্নেহ।
মা তার নিজের স্বপ্নকেও বিসর্জন দেয় তার সন্তানের স্বপ্ন পূরণের ক্ষেত্রে।
মে মাসে যেটি মায়ের ভালোবাসা প্রকাশ করার জন্য পালন করা হয়, সেই কি আসলেই মায়ের ভালোবাসা প্রকাশ করা সম্ভব।—
মায়ের প্রতি আমাদের ভালোবাসা, কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধা কি একটা দিনেই চিরস্মরণীয় করে রাখা যাই, সবকিছুকেই আবেগে করা সম্ভব...!
••• মা দিবসের এই সূচনা কোত্থেকে শুরু হয়েছে??
মা দিবসের সূচনা
মা দিবস বা Mother’s Day মূলত পশ্চিমা সমাজ থেকে উদ্ভূত একটি আধুনিক সামাজিক আয়োজন। বর্তমান ধারার মা দিবসের সূচনা হয় যুক্তরাষ্ট্রে।
"আধুনিক যুগে মা দিবসের উৎপত্তি যুক্তরাষ্ট্র থেকে।
সেখানে প্রতি বছরের মে মাসের ২য় রোববার পালিত হয় এটি।
এই চিন্তাটা প্রথম আসে ফিলাডেলফিয়ার আনা জারভিসের মাথা থেকে। তিনি ১৯০৭ সালে ১২ই মে তার মাকে নিয়ে এক ছোট্ট স্মরণসভার আয়োজন করেন। আনা জারভিসের মা নারীদের একসঙ্গে করে বন্ধুত্ব ও স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করতেন। মায়েদের সন্তান মানুষ করাটা যে অনেক পরিশ্রমের কাজ সেটা সবাইকে জানাতে চেয়েছিলেন তিনি।
ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার গ্র্যাফটনে আনা জারভিসের মা, আনা রিভস জারভিস মায়েদের একটা ‘ডে ওয়ার্ক ক্লাব’ প্রতিষ্ঠা করেন যার লক্ষ্য ছিল শিশু মৃত্যুহার কমিয়ে আনা।
কারণ মিজ জারভিস নিজেও তার নয়টি সন্তান হারিয়েছিলেন। তিনি মারা যান ১৯০৫ সালের ৯ই মে। আর তার স্মরণসভার জন্য আনা জারভিস ১২ই মে বেছে নেন কারণ ওটাই ছিল তার মা মারা যাবার কাছাকাছি একটা রোববার। তার মা যে চার্চে যেতেন সেখানে তার মার উদ্দেশ্য একটি ছোট্ট অনুষ্ঠান করেন।
এরপরের পাঁচ বছরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় সবকয়টি রাজ্যে মা দিবস পালনের চল শুরু হয়। আর ১৯১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন এ দিনটাকে সরকারি ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করেন।
এরপর থেকে প্রতি বছরের মে মাসের দ্বিতীয় রোববার বেশিরভাগ জায়গায় মা দিবস পালন হয়ে আসছে।
••• এসব দিবস নিয়ে ইসলাম আমাদেরকে কি বলে? কুরআন হাদিস এ মায়ের প্রতি কেমন তার কথা বলা হয়েছে?
প্রথমত, ইসলাম কোনো নির্দিষ্ট দিনকে মা-বাবার প্রতি ভালোবাসার দিন বানিয়ে সীমাবদ্ধ করতে বা কোনো সাহাবীরা করেছেন এমন কোনো প্রমাণ নাই বা ওনারা কারোকে উৎসাহ দেয় না।
মা-বাবার প্রতি সদ্ব্যবহার ও প্রতিনিয়ত তাদের প্রতি দায়িত্ব পালনের আদেশ দিয়েছেন সন্তানদেরকে।
আলেমগণ বলেন,
বিদআত বা অনুকরণমূলক রীতিনীতি এড়িয়ে চলা উচিত, বিশেষ করে অমুসলিমদের সংস্কৃতিতে প্রচলিত দিন হলে তো একেবারেই না।
কিছু আলেমদের চিন্তা মতে ----,
যদি এটি কেবল ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার বহিঃপ্রকাশ হয় এবং এতে কোনো হারাম কাজ না থাকে, তবে তা সামাজিক দিবস হিসেবে পালন করা নাজায়েজ নয়।
তারা বলেন, এটিকে ধর্মীয় দিবস হিসেবে না দেখলে এবং শিরক বা বিদআতের আশঙ্কা না থাকলে, এতে দোষের কিছু নেই।
** তবে বর্তমানে যে হারে মানুষ প্রতিনিয়ত মনগড়া জিনিস আবিষ্কার করছে যদিও বা মা দিবস ঘরে ঘরে আদায় করা হবে কিন্তু পরে এমন আকার ধারণ করবে যেটা বন্ধ করা আর সম্ভব হবে না এখানে শুরু হয়ে যাবে বিভিন্ন ফেতনা, দেখা যাবে যে নিজের জন্মদাতা মা বাবা ছাড়া ও হাজারটা মা মানুষ তৈরি করে ফেলবে আদর করে যেভাবে খালাকে মা ডাক ফুপিকে মা ডাকে বাচ্চারা ছোট থাকতে ঠিক ঐভাবে দিবস টা আরো আনন্দদায়ক করার জন্য মায়ের সংখ্যাও বেড়ে যাবে,আর এখানে থেকে শুরু হওয়ার আশংকা অনেক ফেতনার।
তাই এখনই সময় যে জিনিসটা আমাদের মাঝে নাই সে জিনিসটা আমাদের সংস্কারের প্রবেশ করার আগেই জিনিসটাকে বের করে দেওয়া সংস্কার থেকে। নিজেদেরকে সরিয়ে নেওয়া।
কারণ বর্তমানে এ নারী সংষ্কার বিষয়গুলো যেসব দাবি করছে, বেশিরভাগ দাবি যদিও যৌক্তিক না, এটা আমরা সকলে বুঝতেছি, কিন্তু এই দাবি করার সাহস তারা পায় কি করে একদিনেই কি তাদের মাঝে এই সাহস জন্মাইছে, কখনোই না ধীরে ধীরে তারা একেকটা দাবি পূরণ করার পরই তাদের দাবিগুলো এখন এত মজবুত।
বিভিন্ন দিবসের পিছনে থাকে বিভিন্ন কারণ একটু চিন্তা করে দেখেন যে, একটা পরিবার শক্ত হওয়ার পিছনে বাবার যেমন অবদান রয়েছে, তার থেকেও বড় অবদান রয়েছে তার মায়ের, কারণ একটা পরিবারের মা যখন নড়বর হয়ে যায়, তখন হয়ে যায় একটা পরিবার ধ্বংস, আর যখন একটা পরিবার ধ্বংস হয়ে যায় তখন শুধু সকলেই ওই পরিবারটাকেই দেখে কিন্তু তার পিছনের কারণগুলো দেখে না কি কারনে তাদের এই অবস্থা সেটা নিয়ে কেউ ঘাটাঘাঁটি করে না, কিছু মানুষ ছাড়া,
একটু চিন্তা করে দেখেন এই মা দিবসের কে ভালোভাবে পালন করার জন্য যদি এমন হয় যে, অন্যের ছেলে বা এখন তো অনলাইনের জগত হাজারটা মা বানানো যায় আবার হাজারটা ছেলেও বানানো যায়, একজন ছেলে তার মাকে মা দিবসের শুভেচ্ছা জানাচ্ছে! আর মা তার ছেলেকে খুশি করার জন্য কিছু করার বা কিছু দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছে! আর এই মুহূর্তে মায়ের হাতে তেমন সঞ্চয় নাই কখন সীমা কার কাছ থেকে নিবে অবশ্যই তার স্বামীর কাছ থেকে, আর স্বামী যদি হয় মধ্যবিত্ত দিনে এনে দিনে খাই বা তার যেটুকু আছে সবটুকুই তার পরিবারের জন্য যথেষ্ট নয়, এখানে তার পরিবারের জন্যই যথেষ্ট নয় সেখানে আরেকজনকে কিভাবে সে দিবে? তা আউট বিষয় নিয়েই তো হতে পারে তার পরিবারের মধ্যে অশান্তি বা ঝগড়া। আর একটা পরিবারের মধ্যে সাধারণত ঝগড়া থেকে শেষমেষ কতটুকু পড়াইতে পারে সেটা তো সকলেরই জানা, তো হয়ে যেতে পারে পরিবারগুলোও ধ্বংস, আর পরিবারগুলো ধ্বংস হওয়া মানে একটা সমাজ নষ্ট হয়ে যাওয়া। সমাজ নষ্ট হয়ে যাওয়া মানে পুরা জাতি ধ্বংসের দিকে ধাবিত হওয়া। তাই সৌন্দর্য আর আবেগের বিষয় থেকেও চিন্তাভাবনা ও সামাজিক বিষয়গুলো আগে মাথায় রাখা প্রয়োজন।
আমাদের মাযেরা সব সময় আমাদের কাছে সম্মানের, আল্লাহ তো কুরআনের বলেই দিয়েছেন যে ------,
“তোমার পালনকর্তা নির্দেশ দিয়েছেন, তিনি ব্যতীত অন্য কারো ইবাদত করো না এবং পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করো। তাদের একজন বা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হন, তবে তাদেরকে ‘উফ্’ বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিয়ো না, বরং তাদের সাথে সম্মানের সাথে কথা বলো।”
(সূরা ইসরা: ১৭:২৩-২৪)
জানে আল্লাহ তায়ালা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তাদের সেবাতে নিজেকে নিয়োজিত রাখতে আদেশ দিয়েছেন সেখানে তো তাদের জন্য প্রত্যেকটা দিনই মা দিবস হিসেবে পরিচালিত হওয়ার কথা আলাদা করে কোন দিবস লাগার কথা না।
আল্লাহ তাআলা অন্য আরেক আয়াতে
বলেছেন :-----
“আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছি। তার মা তাকে কষ্টের পর কষ্ট সহ্য করে গর্ভে ধারণ করেছে, এবং তার দুধ ছাড়ানো দুই বছরের মধ্যে। সুতরাং আমার প্রতি এবং তোমার পিতা-মাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও, অবশেষে আমার কাছেই প্রত্যাবর্তন।”
(সূরা লুকমান: ৩১:১৪)
মায়ের প্রতি আমাদের কতটা গুরুত্ব সেটা হাদিসের প্রতি খেয়াল করলে আরো ভালোভাবে বুঝা যায় যেমন :---
**এক ব্যক্তি রাসূল (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করলো, “আমার উপর সবচেয়ে বেশি হক কার?”
তিনি বললেন: “তোমার মা।”
সে বললো: “তারপর কে?”
তিনি বললেন: “তোমার মা।”
সে আবার বললো: “তারপর কে?”
তিনি বললেন: “তোমার মা।”
সে বললো: “তারপর কে?”
তিনি বললেন: “তোমার বাবা।”
(সহীহ বুখারী, হাদীস: ৫৫২৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস: ২৫৪৮)
ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি মা দিবস কেমন হওয়া উচিৎ..!
আমরা বছর মা দিবস পালন করি শুরু একদিন।
কিন্তু আমাদেরকে ইসলাম শিখায় প্রতিটি দিনই আমাদের জন্য মা দিবস।
রাসূল (সা.) বলেছেন –
"মায়ের পায়ের নিচে জান্নাত।" (সহীহ মুসলিম)
মা দিবস পালন যদি ও মতভেদ আছে অনেক।
কিন্তু মায়ের সেবা, করার বেপারে কমতি হওয়ার কোনো মতবিরুদ নেয়।
কোনো ভালোবাসা কখনোই একদিনের জন্য হয় না আবার একদিন এ প্রকাশ করা ও সম্ভব না। তাই শুধু শুধু ফিতনাময় কাজের প্রতি এতো আগ্রহ না দেখিয়ে মায়ের শদ্ধা ও ভালোবাসা বাড়ে এমন কাজ করেনা প্রতিদিন।
আল্লাহ সকলকে মা বাবার প্রতি সম্মান ও শদ্ধা রেখে প্রতিটা দিন পার করা তাওফিক দান করুণ।
আমীন...,
Comments
Post a Comment