জিলহজ মাস কি? কি তার ফজিলত..! এই মাসে মুসলিম উম্মার কি কাজ.! কিভাবে কাটালে ভালো হয় এই দিনগুলো চলুন জেনে নিন..!
আলহামদুলিল্লাহ বর্মমানে আমরা এখন জিলহজের মাসের ২দিন পালন করে ফেললাম, রমজানের দিনগুলো আসার আগে মানুষের মাঝে যে একটা আনন্দ ছিল, ধীরে ধীরে এক একটা দিন করে করে রমজান মাসেও চলে গেল, এরপরে প্রত্যেকটা মানুষ অপেক্ষা করছিল কোরবানির দিনগুলো আসার, দেখতে দেখতে সেই এক দেড় মাসেও চলে গিয়ে বর্তমানে জিলহজ মাস চলে আসলো দেখতে দেখতে জিলহজ মাসের দুই দিন চলেও গেল, এভাবে বাকি দিনগুলো চলে যাবে, হ্যাঁ তবে থাকবে আপনার আমল গুলো আপনার সাথী হয়ে, তাই যে ২ দিন চলে গেছে তো চলে গেছে বাকি যেই দিনগুলো আছে ওইগুলো আছে সেগুলোকে আমলের সহিত কাটানোর চেষ্টা করা, কারণ বলা তো যায় না যে আগামী বছরও এই দিনগুলো আপনি পাবেন ।
আর রমজান চলে যাওয়ার পরে এই দশটা দিনই আমাদের কাছে অনেক বড় একটা পাওয়া বা রহমতস্বরূপ, যার মূল্য অনেক, কিন্তু অনেক মানুষ না জানা বা না বুঝার কারণ এ অবহেলা করে এই দিনগুলো কাটিয়ে দেয় বাকি অন্য দিন গুলোর মত,,
•• রাসুল (সা.) বলেছেন, আল্লাহর নিকট অন্য যে কোনো সময়ের আমলের চেয়ে জিলহজের প্রথম দশকের আমল অধিক প্রিয়,। [সহিহ বুখারি]
*** জিলহজ মাসে আমরা যে সমস্ত কাজ থেকে বিরত থাকি বা থাকবো :---
জিলহজ মাসে প্রথম ১০দিন চুল নখ কাটা থেকে বিরত থাকবো সকালেই ইনশাআল্লাহ।
•• তবে হা এখনে অনেকের প্রশ্ন থাকতে পারে যদি কেউ কোরবানি না করে তাহলে তাদের ক্ষেত্রে কি এটা প্রযোজ্য??
নাকি যে ব্যাক্তি কোরবানি দিবে তাদের জন্য এটা প্রযোজ্য??
~~তাঁদের উত্তরে বলা যেতে পারে..,
জিলহজ মাসের প্রথম দশকের এক বিশেষ আমল হল:--
যিলহজ্বে মাসের চাঁদ ওঠা থেকে কুরবানী করার আগ পর্যন্ত নখ-চুল না কাটা,
মেয়েরা তাঁদের মাথার চুল ও চিরনি দিয়ে আঁচড়াবে না, গোসলের সময় হালকা করে চুল এ পানি লাগাবে যাতে চুলের গোড়া নরম হয়ে চুল না ছিড়ে সেদিকে খেয়াল রাখবেন, কারণ যে সমস্ত মেয়েরা মাথার চুল রাখবে তাদের তো জিলহজ মাঝে মাসের প্রথম দিন থেকেই যেভাবে চুল আঁচড়িয়ে বেঁধে রাখবে ১০ দিন একই ভাবে রাখতে হবে।
এতে একদিকে হাজীগণের সাথে সাদৃশ্য হয়। অন্যেদিক এ এর জন্য রয়েছে বিশেষ ফযীলত।
•• যারা কুরবানী করবেন না তারাও এ ফযীলতপূর্ণ আমলে এ শরীক হতে পারেন।
সেটা সাহাবাগণ ও তাবেয়ীনের আমল থেকে বোঝা যায়।
এমনকি পরিবারের সকল ছোট বাচ্চাদের চুল-নখ কাটা থেকে বিরত রাখতে পারেন।
••• আব্দুল্লাহ বিন আমর ইবনুল আস রা. থেকে বর্ণিত-
أَنّ رَسُولَ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ قَالَ لِرَجُلٍ: أُمِرْتُ بِيَوْمِ الْأَضْحَى عِيدًا جَعَلَهُ اللهُ عَزَّ وَجَلّ لِهَذِهِ الْأُمّةِ، فَقَالَ الرّجُلُ: أَرَأَيْتَ إِنْ لَمْ أَجِدْ إِلّا مَنِيحَةً أُنْثَى أَفَأُضَحِّي بِهَا؟ قَالَ: لَا، وَلَكِنْ تَأْخُذُ مِنْ شَعْرِكَ، وَتُقَلِّمُ أَظْفَارَكَ، وَتَقُصّ شَارِبَكَ، وَتَحْلِقُ عَانَتَكَ، فَذَلِكَ تَمَامُ أُضْحِيَّتِكَ عِنْدَ اللهِ عَزّ وَجَلّ.
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমাকে কুরবানীর দিবসে ঈদ (পালনের) আদেশ করা হয়েছে, যা আল্লাহ এ উম্মতের জন্য নির্ধারণ করেছেন। এক সাহাবী আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! যদি আমার কাছে শুধু একটি মানীহা
({মানীহা:-- অর্থাৎ দুধ দোহনের জন্য ধার নেওয়া একটি স্ত্রী পশু)},
তাহলে আমি কি সেই মানিহা কুরবানি দিতে পারি?
••নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন উত্তরে বলেন:---না
বরং তুমি তোমার চুল কাটবে, নখ ছাঁটবে, গোঁফ ছোট করবে ও যৌনাঙ্গের লোম পরিষ্কার করবে।এই কাজগুলোই তোমার পক্ষ থেকে কুরবানির পূর্ণতা হিসেবে বিবেচিত হবে।"
** আর যাদেরকে আল্লাহ তাঁয়ালা কুরবানী করার তাওফিক দিয়েছেন তারা তো অবশ্যই এ আমলগুলোর প্রতি যত্নশীল হবেনই..।
•• রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম ইরশাদ করেন-
إِذَا رَأَيْتُمْ هِلَالَ ذِي الْحِجّةِ، وَأَرَادَ أَحَدُكُمْ أَنْ يُضَحِّيَ، فَلْيُمْسِكْ عَنْ شَعْرِهِ وَأَظْفَارهِ.
যখন যিলহজ্বের দশক শুরু হবে তখন তোমাদের মধ্যে যে কুরবানী করবে সে যেন তার চুল নখ না কাটে।
{-সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৯৭৭; জামে তিরমিযী, হাদীস ১৫২৩}
এই হাদীসের উপর ভিত্তি করে ফকীহগণ কুরবানীকারীর জন্য নখ-চুল না কাটাকে মুস্তাহাব বলেছেন। তাই যিলকদ মাসেই চুল-নখ কেটে যিলহজ্বের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা চাই। যাতে তা বেশি লম্বা হয়ে না যায়, যা সুন্নতের খেলাফ।
অতএব যিলহজ্ব আগমনের পূর্বেই নখ-চুল কেটে ছেটে পরিপাটি হয়ে থাকা বাঞ্ছনীয়।
*** অন্যান্য দিনগুলো থেকে ও এই দিনগুলোকে আমরা যেভাবে উত্তম ভাবে কাটাতে পারি, তার জন্য কিছু নিয়ম মাথায় রেখে দিন গুলোকে শেষ করা যেভাবে আমরা রমজান এর দিন গুলোতে চেষ্টা করি ভালো কিছু করার যেমন:--
•• যদি সম্ভব হয় এই দিনগুলোতে রোজা রাখা, আর আলহামদুলিল্লাহ এখন তো দিনও খুব ঠান্ডা বা বিভিন্ন জায়গায় বৃষ্টি হচ্ছে, রোজা রাখলে রোজা ক্লান্তিটাও কম হবে। চেষ্টা করলে বর্তমানে রোজার আমলটা করা খুবই সহজ এই হিসেবে এই আমলটা অবশ্যই করার চেষ্টা করবেন।
রোজা গুলো এক একটা রোজা এক এক বছরের গুনাহ মাফের মাধ্যম, ও এক একটা রাত শবে কদরের রাতের সমতুল্য।
•• পাঁচ ওয়াক্ত নামাজগুলো ভালোভাবে আদায় করা,সাথে নফল গুলোর প্রতি ও যত্নবান হওয়া।
•• সময় করে রাতে সুযোগ হলে সালাতুত তাসবিহ এর নামাজটা আদায় করা।
•• সদকা বা দান করা, প্রতিদিন অল্প হলেও কিছু দান করা,পথে অনেক শিশু বা গরীব কোন পরিবারকে দিতে পারেন আপনার সমার্থ অনুযায়ী।
• আল্লাহ তাঁয়ালা বলেন :--তোমরা যা কিছু ব্যয় করো, আল্লাহ তার প্রতিদান দেবেন।”
(সূরা সাবা ৩৯)
•• আরো কিছু ছোট ছোট কাজ আছে সেগুলো আমরা চাইলে খুব সহজে করতে পারি
• যেমন কারোকে পানি পান করানো সাদকাহ।
• অনলাইনে চাইলে অনেক গরিব পরিবারকে সাহায্য করতে পারেন যাদের বাড়িঘর এখন পানিতে ডুবে গেছে বন্যার কারণ এ..! বা নিজের গরিব আত্মীয়কে কিংবা নিজের গ্রামের গরিবদেরকে ও দান করতে পারেন।
•• রাসূল ﷺ বলেন: “আগুন থেকে বাঁচো, একটুকরো খেজুর দান করেও যদি হয়।”
(বুখারী ও মুসলিম)
• অথবা গাজা বা ইয়েমেনের জন্য দান করতে পারেন।
•• সাদাকাহ শুধু টাকা দেযেই হয় এমন না, আপনি মানুষের সাথে হাঁসি দিয়ে কথা বলবেন এটা ও একটা সদকা।
•• আরাফার রোযার প্রস্তুতি নেওয়া। সেদিন সকালে অবশ্যই রোজা রাখার চেষ্টা করা যদি সম্ভব হয়।
•• যুলহিজ্জা হলো আরাফার দিন। রাসূল ﷺ বলেন—
عن أبي قتادة رضي الله عنه قال: سئل رسول الله صلى الله عليه وسلم عن صوم يوم عرفة؟ فقال:
"يُكَفِّرُ السَّنَةَ الْمَاضِيَةَ وَالْبَاقِيَةَ."
[সহীহ মুসলিম, হাদীস: ১১৬২]
আবু কাতাদাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:--
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আরাফার দিনের রোযা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন—
“এটি পূর্ববর্তী বছরের ও পরবর্তী বছরের গুনাহসমূহের কাফ্ফারা (মাফের উপায়)।”
(বা “আমি আশাবাদী, আল্লাহ তা’আলা আরাফার রোযার মাধ্যমে আগের বছরের ও পরের বছরের গুনাহ মাফ করে দিবেন।)
অর্থাৎ এই দ্বারা বুঝা যাই,আরাফার দিনের রোযা রাখলে আল্লাহ তা'আলা বান্দার বিগত বছরের ও আগামী বছরের ছোটখাটো গুনাহ ক্ষমা করে দেন।
অর্থাৎ সগীরা (ছোট) গুনাহ সমূহ
কারণ কবীরা (বড়) গুনাহ মাফ হবে না,তওবা করা ছাড়া।
*** গোপনে ভালো কিছু আমল করুণ যেটা আপনার বিভিন্ন কাজের মাঝেও আপনি করতে পারেন। সে আমল আপনি আর আপনার রবে মাঝেই শুধু সীমাবদ্ধ। যেমন :---
• রাতের শেষ ভাগে কিছু তাহাজ্জুদপড়া, আল্লাহ কাছে নিজের ও নিজের পরিবারের জন্য উত্তম কিছু চাওয়া নিজের ভবিষৎ এর জন্য উত্তম জীবনসঙ্গী যাওয়া।
• আল্লাহর কাছে হজ ওমরা করার মতো তৌফিক খুজে নেওয়া।
• মানুষকে দেওয়ার মতো সম্পদ খুঁজে নেওয়া,
• নিজেকে দুনিয়াতে উত্তম ভাবে পরিচালিত করে আখেরাতে উপস্থিতি হওয়ার সৌভাগ্য,আল্লাহ তায়ালার কাছ থেকে চেয়ে নেওয়া।
• আল্লাহর কাছ থেকে চেয়ে নেওয়া পরমুখেপেক্ষী যেনো কখনো না করেনা।
• আল্লাহতায়ালা যদি সৌভাগ্য দেয় তাহলে কেউ না জানে মতো সাহায্য করা। আর সাহায্য করার মত তৌফিক হলে পরে যেন তাকে কখনো খোটা না দেওয়া হয়, দিকেও খেয়াল রাখা।
•• রাসূল ﷺ বলেন:--
“সাত শ্রেণির মানুষ কিয়ামতের দিন আরশের ছায়ায় থাকবে… তার মধ্যে একজন হলো— যে এমনভাবে দান করে, তার বাম হাত জানে না, ডান হাত কী দিয়েছে।” (বুখারী ও মুসলিম)
*** প্রতিদিন কিছু দোয়া নির্দিষ্ট করে আমল করার সৌভাগ্য যেন আল্লাহ তায়ালা দেয় সেই দোয়া করা।
কারণ এই দিনগুলোতে দোয়া সবচেয়ে বেশি কবুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, আপনি আমি কেউ জানিনা কখন আমাদের এই নিঃশাস বন্ধ হয়ে..! কোন অবস্থায় আমাদের জীবনের স্রোত থেমে যাই,আল্লাহর পরীক্ষার দিন শেষ হয়ে যাই।
কিন্তু মনে হতে পারে এই জিলহজ মাসের আমলের উসিলায় আপনার তাকদীর পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে। তাই বারবার স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি এই ১০ দিনের আমল খুব ভালোভাবে করেন। রান্নাবান্না বা ঘরের প্রয়োজনীয় কাজের মাঝে মাঝে আপনি ছোট ছোট দোয়াগুলো পড়েন। বের হয়েছেন গাড়িতে উঠছেন তাও মনে মনে দোয়া করতে থাকেন,হাঁটতেছেন তখনও মনে মনে পড়তে থাকেন।
আর অবশ্যই আমরা যাই করি না কেন নামাজের পরে মুনাজাত করে উঠবো ইনশাআল্লাহ।
নিজের ঈমানের জন্য
মা-বাবা, সন্তান, স্বামী/স্ত্রীর জন্য এবং পরিবারের জন্য।
মৃত্যুর পরের শান্তির জন্য
জান্নাতের জন্য
গুনাহ মাফের জন্য
মুসলিম উম্মাহর জন্য
ফেতনা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ইত্যাদি নিজের মন থেকে আরও কিছু দোয়া করবেন যেটা আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী।
** কাজের মাঝে মাঝে ছোট ছোট দোয়াগুলো পড়তে পারি আমরা।
•• সুবহানাল্লাহ,
•• আলহামদুলিল্লাহ,
•• আল্লাহু আকবার,
•• আস্তাগফিরুল্লাহ,
•• লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ, •• হাসবুনাল্লাহু ওয়া নিয়মানু ওয়াকিল নিয়েমাল মাওলা ওয়া নিয়েমান নাসির,
•• লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জোয়ালিমিন,
•• লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ,লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, মাঝে মাঝে লা ইলাহা মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ এভাবে পড়তে থাকা।
এই আমলগুলো অবশ্যই আপনার সাথে ও আল্লাহর সাথে গোপন ভালোবাসার নিদর্শন হয়ে থাকবে,
•• হাতে যদি যথেষ্ট পরিমাণ সময় থাকলে তাহলে আপনি ইসলামিক কোন বই পড়তে পারে,অর্থাৎ যে বই পড়লে আপনার জ্ঞান বৃদ্ধি পাবে এমন সব বইগুলো পড়া।
•• প্রতিদিন অল্প কিছু কোরআন তেলাওয়াত করা, অল্প কিছু কুরআনের আয়াতের তাফসীর শুনা।
•• দু একটা হাদিস পড়া এবং তা নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করা।
আল্লাহ তাঁয়ালা আমাদের সকলকে ও আমাদের পরিবার গুলোকে এই বরকতময় দিনগুলোর সম্মান ও সৎ আমল করার মাধ্যমে কাটানোর তাওফিক দান করুণ।
আল্লাহ তাঁয়ালা যেনো প্রতিটি মুহূর্তে তাঁর রহমত ও সন্তুষ্টির চাদরে মুড়ে নেয় আমাদেরকে...
আমীন।..
সুম্মা আমীন..!
Comments
Post a Comment