কিসের লোভে প্রতিনিয়ত ছুটছি আমরা.. কিসের এতো হতাশা!

 আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহী 

ওয়া বারাকাতুহ্....




একজন মানুষ যদি জানতো বা উপলব্ধি করতে পারতো যে সে দুনিয়ার থেকে বিদায় নেওয়ার পরে কতো অল্প সময়ে পরিবার আসে পাশে  পরিচিত মানুষ ও বন্ধুবান্ধব ভুলে যাবে. তাহলে সে কারোকে সন্তুষ্টি বা কারো মন পাওয়ার জন্য দুনিয়াতে এতো উতলা হতো না একমাত্র আল্লাহর সুন্তুষ্টি অর্জন ছাড়া।

মানুষের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করাটা বা নিজেকে সবার  কাছে পরিচিত করাটা মানুষকে এতোতাই ব্যস্ত করে রেখেছে যে তাদেরকে দেখে মনে হয়না  টাকা বা সমার্থবান ব্যক্তিরা কখনো মৃত্যুবরণ করে। যদি ও এমন ভাব কখনো কারো মাঝে বিদ্যামান হওয়া ঠিক না...।

কারো নৈকট্য বা কারো সাথে চলা- ফেরা করতে পরা বা করা এটাকে নিজের অনেক বড় অর্জনে বা সুভাগ্য মনে না-করা, এই খনোস্থায় পৃথিবীর কোনো  কোনোকিছুকেই নিজের অভ্যাস এ পরিণত না  করা.।

মানুষ যদি বুঝতো বা তার নিজের জ্ঞান দ্বারা অনুদাব করতো যে, সে কিসের পিছনে ছুটছে.. তাহলে সে অনুদাব করতো যে আমার দিন শেষ লাস্ট ঠিকানা তো মৃত্যু......

আমি কার জন্য এমন করছি কার পিছনে নিজের মূল্যবান সময় ব্যয় করছি! আমার কিসের এত তাড়া, কার জন্য আমি আমার জীবনটা শেষ করে দিচ্ছি! কিসের পিছনে আমি এভাবে উঠে পড়েছি, এসব চিন্তা করলে মানুষ আর এভাবে ছুটতো না ধুয়ায় ধূসর পৃথিবীর মায়ায়..!

 কারো দূরে সরে যাওয়াতেও হতোটা তার এতো কষ্ট,সে কষ্ট পেলেও নিজেকে আবারো ফিরিয়ে আমতে পারতো তার আগের থেকে ভালো জায়গায়, জীবন থেকে হতাশার ভাগ কমে যেতাম, কারণ তখন অন্তরে জায়গা পেতো আল্লাহর ভালোবাসা ও মহব্বত,

সে কেবল তাঁর ববের ভালোবাসা, ক্ষমা ও সন্তুষ্টি লাভের চেষ্টাতেই নিজের জীবন পরিচালনায় ব্যস্ত থাকতো. যারা কাছে  থেকে দুনিয়াতে আশা আবার তার কাছেই দুনিয়াথেকে ফিরে যাওয়ার স্থান,

যিনি আমাদেরকে সুরক্ষিত রেখেছেন  আলোবিহীন ও বাতাসবিহীন  অন্ধকার  সেই মায়ের পেটে, যেখানে ছিলোনা আমাদের কোনো  বন্ধু বান্ধব বা আত্মীয়-স্বজন ছিল না, ছিলো না কোন রক্ষাকারী বা মায়াদারি একমাত্র দয়াময় ও মায়াশীল আল্লাহ তাঁয়ালা ছাড়া । 

এই প্রসঙ্গে শাইখ আলি তানতাবি রাহিমাহুল্লাহ একটা কথা  উল্লেখ করা যাই।

একবার শাইখ আলি তানতাবি রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন, 'একবার আমার জানতে ইচ্ছে হলো, আল্লাহ কি সত্যিই আমাকে ভালোবাসেন? 

আগ্রহ ও কৌতূহলের জায়গা থেকে আমি এর উত্তর পেতে চাইলাম কুরআন থেকে।

কুরআন খুলে দেখতে লাগলাম যে, আল্লাহ কাদের ভালোবাসেন? কী তাদের বৈশিষ্ট্য..?

আমি কুরআন খুলে দেখলাম, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা নেককারদের ভালোবাসেন। ভাবলাম, 'আমি কি নেককার বান্দা?' মনে হলো, না। তাহলে তো আমি এই তালিকা থেকে বাদ পড়লাম।

তারপর দেখলাম, আল্লাহ ধৈর্যশীলদের ভালোবাসেন; কিন্তু নিজেকে খুব বেশি ধৈর্যশীল বলে মনে হলো না আমার। ফলে এই তালিকা থেকেও বাদ পড়ে গেলাম।

এরপর দেখলাম, আল্লাহ মুজাহিদদের ভালোবাসেন, যারা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে; কিন্তু আমার মতন অলস আর অক্ষম ব্যক্তি তো এই তালিকায় ওঠার কথা ভাবতেও পারি না। ফলে এখান থেকেও ছিটকে গেলাম।

তারপর দেখলাম, আল্লাহ তাদের ভালোবাসেন, যারা সৎ কাজে এগিয়ে: কিন্তু নিজের আমল আর আখলাকের দৈন্যদশা দেখে এই তালিকাতেও নিজেকে ভাবা গেলো না।

একপ্রকার হতাশা আর গ্লানিবোধ নিয়েই আমি কুরআন বন্ধ করে ফেলি। 

নিজেরা আমল, তাকওয়া আর ইখলাসের দিকে তাকিয়ে আমি তাতে রাজ্যের ভুল-আন্তি ছাড়া আর কিছুই খুঁজে পেলাম না। কিন্তু একটু পরেই আমার মনে হলো, "যাই আল্লাহ তো তাদেরও ভালোবাসেন যারা তাওবা করে আল্লাহর দিকে ফিরে আসে।'

মনে হলো, এই একটা বৈশিষ্ট্যই বুঝি আমার জন্য মজুদ আছে এবং আমি তা যখন-তখন নিজের মধ্যে ধারণ করতে পারি। এরপর আমি খুব বেশি পরিমাণে ইস্তিগফার পড়তে থাকি, যাতে করে আমি আল্লাহর সেসব বান্দাদের তালিকাভুক্ত হতে পারি, যারা অধিক পরিমাণে তাওবা করে এবং যাদের আল্লাহ ভালোও বাসেন।

আমরা হয়তো-বা নেককার হতে পারলাম না, আল্লাহর রাস্তায় মুজাহিদ হওয়ার সৌভাগ্যও হয়তো আমাদের কপালে নেই। অনুপম ধৈর্য্যের অধিকারী কিংবা যারা বেশি ভালো কাজে অগ্রগামী তাদের দলভুক্তও হয়তো হতে পারলাম না; কিন্তু তাই বলে কি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার ভালোবাসার তালিকা থেকে একেবারে বাদ পড়ে যাবো? কখনোই নয়। আল্লাহর প্রিয়ভাজন হওয়ার একটা রাস্তা সদা-সর্বদা খোলা রয়েছে আমাদের জন্য। আর সেই রাস্তা হলো-তাওবার রাস্তা। অধিক পরিমাণে তাওবা করা। আল্লাহর কাছে নিজের পাপ, নিজের ভুল, নিজের অবাধ্যতার জন্য ক্ষমা চাওয়া।

সেই পোকামাকড়ের ঘরে, সেই অন্ধকার গর্তে, সেই নিস্তব্ধ ভয়ার্ত পরিবেশেও যদি  আমাদের সঙ্গী কেউ হয় তাহলে সেটা একমাত্র আল্লাহ তাঁয়ালা,একাকিত্বের সঙ্গী কখনো কেউ হয়না সেটা দুনিয়ারতে ও আপনি চিন্তা করলে বুঝতে পারবেন। তবে আল্লাহ তাঁয়ালা দুনিয়া ও আঁখিরাত বিপদে আপদে সকল অবস্থায় বন্দার সাথেই থাকেন। তাই আমাদেরকে একমাত্র সেই মহান রবেরই রহমত ও দয়া তালাশ করতে হবে।

সুতরাং, কোথায় ও যাবার রাস্তা নাই  একমাত্র আল্লাহর  সুন্তুষ্টি অর্জন ছাড়া..।

কারণ আমরা যদি আল্লাহকে বাদ দিয়ে  দুনিয়ার সুখ ও বাইরাল জগতের পিছনে ছুটি  তাহলে এই পথের শেষে পাবো নিঃসীম অন্ধকার। 

আর পাবো সেই পথের গন্তব্য যে পথে রয়েছে প্রজ্জ্বলিত আগুন, যা আল্লাহ তাঁয়ালা  তৈরি করেছেন পথভোলা, অবাধ্য আর অহংকারীদের জন্য। 

আপনি আর আমাকে আল্লাহ তাঁয়ালা এতো মুহাব্বত করে সৃষ্টি করেছেন এই নরক  বা জাহান্নামে এ কীটপতঙ্গের খাদ্য বানানোর জন্য না, বরঞ্চ জান্নাতে আনন্দে ও ভোগবিলাসী করে অনন্তকাল জীবন পারি দেওয়ার জন্য সৃষ্টি করেছেন।

 কিছুদিনের জন্য পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন, এবং  জ্ঞান বুদ্ধি  ও  বিবেক দিয়েছেন  সঠিক বুঝ গ্রহণ করে এই পৃথিবীর অল্প সময়টা খুব সুন্দর করে কাটানোর জন্য, আল্লাহর ভালোবাসা অন্তরে ধারণ করে,তার ভালবাসাকে বিকৃত করে না।

আমার-আমি কি আলোর দিকে যাত্রা করব, নাকি হারাব অতল এক অন্ধকারে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে প্রশ্ন করতে হবে-'আসলে,আমি কোথায় যাচ্ছি?'কি চাচ্ছি আমি আমার এই অল্প দিনের হায়াতে এ।

নিজেকে পরিবর্তন করা জরুরি একমাত্র রবের জন্য।আর এই চিন্তা যখন থেকে আপনি করবেন ঠিক তখনই সেই মুহূর্ত থেকে নিজেকে পরিবর্তন করা শুরু করুন। আমার এই লিখাটা যদি আপনি এই পর্যন্ত পড়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনি কিছু না কিছু চিন্তা করছেন, যদি ভাবেন যে আপনার জীবন এ ও কোনো কিছুকে পরিবর্তন করা পয়োজন তাহলে সেটা এখন থেকেই শুরু করেনা।

কখনোই অপেক্ষা করবেন না,কারণ দিনশেষে যারা অপেক্ষা করে তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

আল্লাহ এই অল্প হায়াত খুব সুন্দর করে কাটানোর তোফিক দান করুণ আমিন।




Comments