বৃষ্টি আল্লাহর একটা রহমত, তবে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে এই রহমত যেন কারো গীবত করার সুযোগ এ পরিণত না হয়।




গীবত..!
 এখন যেহেতু বৃষ্টি পড়ার দিন, কিছুক্ষন বৃষ্টি পরতেছে আর না পড়লে বন্ধ থাকতেছে, এখন রোদ উঠতেছে আবার এখনই বৃষ্টি পড়তেছে অর্থাৎ এখন এরসময়গুলো দিন বলেন আর রাত বলেন যেকোনো সময় বৃষ্টি পরতেছে, আর মানুষ যেহেতু বাহিরে থাকতে থাকতে অভ্যাস বা যার যেটা প্রয়োজন তার সে প্রয়োজনে পূর্ণ করার জন্য তাকে বের হতে হচ্ছে, তবে হ্যাঁ এত কিছুর পরও আমাদের সমাজে কিছু মানুষ আছে, যাদের কাজই শুধু এত বৃষ্টি তো এ বের হচ্ছে এর কোন কাজ নেই, এত বৃষ্টিতে কি বের হতে হয়, ঘর থেকে বের না হলে হয় না, অথবা এ ঘরে মনে হয় সহ্য হচ্ছে না বা ঘর তাকে সহ্য করতে পারতেছে না, ইত্যাদি এভাবে বিভিন্ন ধরনের কথা বলে, মানে তারা একা থাকতে পারে না তাদের কারো না কাউকে নিয়ে সমালোচনা করতেই হবে।
•• মহানবী হজরত মুহাম্মাদ (সা.) বলেছেন, ‘পরচর্চাকারী জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।’ (বুখারি ও মুসলিম)।
 আবার আরেক দল লোক থাকে যারা তাদের এই সব কথা শোনে, কোন প্রতিক্রিয়া জানায় না, জানায় না তাকে তার ভুলের কথা, নিজেও পাত্তা দিচ্ছে না নিজের সময় ও নিজের মান সম্মানের দিকে নিজের দ্বীনের দিকে।
ইসলামে গিবত বা পরনিন্দা সম্পূর্ণরূপে হারাম ও নিষিদ্ধ। 
গিবত করা ও গিবত শোনা সমান অপরাধ। অনেকে পরনিন্দাকে নিষিদ্ধ বলে মনেই করেন না। মদ্যপান, যেনা ব্যচুরি, ডাকাতি, ব্যভিচার ইত্যাদির চেয়েও মারাত্মক ও নিকৃষ্টতম পাপ ও কবিরা গুনাহ গিবত।
••• রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন আমাকে মিরাজে নিয়ে যাওয়া হলো, তখন আমাকে তামার নখওয়ালা একদল লোকের পাশ দিয়ে নিয়ে যাওয়া হলো। তারা তাদের নখগুলো দিয়ে মুখমণ্ডলে আর বুকে আঘাত করে ক্ষতবিক্ষত করছিল। আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে জিবরাইল! এরা কারা? জিবরাইল (আ.) বললেন, এরা দুনিয়াতে মানুষের গোশত ভক্ষণ করত এবং তাদের মানসম্মান নষ্ট করত। অর্থাৎ তারা মানুষের গিবত ও কুৎসা করত।’ (আবু দাউদ)।

 আর এখানে অপরের মান সম্মান নষ্ট করেছে  এই কথাটা খেয়াল করলেই আমরা অনেক কিছু বুঝতে পারবো যে, আসলেই কারকে নিয়ে তার অবর্তমানে সমালোচনা করতে গেলে, বেশিরভাগ সময়ই কিছু বাড়তি কথা বলা হয়, যেটা সে না বা সে শুনলে কষ্ট পাবে, কারণ যখন দুইজন বা তিনজন একসাথে কাউকে নিয়ে আলোচনা করে, ওই আলোচনায় তাদের সাথে আরও একজন থাকে সে হল শয়তান, তারা এক প্রসঙ্গে কথা বলতে গেলে তাদের মাথায় বা তাদের খেয়ালে অন্য আরেকটা প্রসঙ্গ নিয়ে আসে, আর সে তো নিয়ে আসবেই কারণ তার পৃথিবীতে আসার লক্ষ্যই তো হল মুসলমানকে খারাপের দিকে ধাবিত করা, আপনি আমি হয়তো আমাদের কাজগুলো দুনিয়ার ভালোমতো করছি না, যতটুকু ইবাদতে আমাদের সময় গুলো কাটানোর কথা ছিল তার অল্প টাও দিচ্ছি না, কিন্তু শয়তান তো আসমান জমিন উভয়টাই দেখেছে, সে জানে সে যতদিন দুনিয়ায় থাকবে এটাই তার জন্য শান্তি বা জান্নাত, পৃথিবী থেকে যেদিন মুসলমানরা শেষ হয়ে যাবে বা দুনিয়া ধ্বংস হয়ে যাবে, এরপর থেকে তো শয়তানের আর কোন কাজ নাই, সে তো জানে যে সে অনন্তকাল জাহান্নামে বসবাস করবে, আর তার জন্য যেহেতু দুনিয়াটা জান্নাত সে জান্নাতের কাজ তো করবেই আর এটাই হলো তার শান্তি...! 
 কিন্তু আমরা তো মুসলমান আমাদেরও তো বুঝতে হবে যে, আমরা যদি তার কথা শুনে তার কথা মতে, কোন কাজটা বেশি মারাত্মক গুনাহ বা কোন কাজটা অল্প গুনাহ কোন কাজের মাধ্যমে আমরা কি লাভ করব, আর কোন কাজ করলে আমরা কতটুকু পাপের শাস্তি পাবো, এগুলোতে যদি জেনে মাথায় না রাখি তাহলে আমাদের পরবর্তী জীবন তো আমরাই কঠিন করে ফেলছি..!
 আমরা না চাইতেও অনেক সময় আমরা অন্যের সমালোচনা করে ফেলতেছে, তাই যথা সম্ভব বেশি মানুষের মজলিসে কম থাকা, হ্যাঁ তবে দ্বীনদার মজলিশ হইলে অবশ্যই অবশ্যই থাকা.।
নিজের কষ্টের ইনকাম খেয়ে অন্যের সমালোচনা করার কি এমন প্রয়োজন..?
 গীবত করার ফলে কিয়ামতের সেই গীবত এর বদলে নিজের সৎ কাজ বা নিজের সাওয়াব গুলো দুনিয়াতে যে যার গীবত করেছিলো তাকে দিয়ে দিতে হবে, এর থেকে বড় কষ্টের আর কি আছে মৃত্যুর পরে, সকলে নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকবে কেয়ামতের দিন আর একটু নেকির আশায় এদিকে ওদিকে ঘুরবে যেন তার বিচারটা সহজ হয় এবং সে জান্নাতে যেতে পারে। ঠিক যেমন পরীক্ষার হলে যখন প্রশ্ন সহজ না হয় বা নিজের পুরা খাতায় কিছু লিখতে না পারে অল্প কিছু লেখা ছাড়া, তখন সকলেই চেষ্টা করে কারো কাছ থেকে দেখে হলেও অল্প কিছু পাশের পাস করার মত নাম্বার লিখার মাধ্যমে তোলার।
 আর কিয়ামতের দিনও সেম মানুষের সাথে এমনটাই হবে, সকলেই চেষ্টা করবে আমল দ্বারা উত্তীর্ণ হওয়ার না পারলে কারো কাছ থেকে নিয়ে হলেও নিজের আমলনামা গুলো আল্লাহর কাছে জমা দেওয়ার, ঠিক এমন মুহূর্তে পৃথিবীতে যারা গীবত করে চলাফেরা করছে, মানুষের সমালোচনা করছে মানুষেকে নিয়ে হাসাহাসি করছে, এখন তো অনলাইনের যুগ মোবাইলে কি হচ্ছে না হচ্ছে ওদেরকে নিয়ে ও বাস্তবে আলোচনা করছে, এমনও অনেক অভিনেত্রী বা অভিনেতা আছে, যারা আমাদের কেউই না শুধু আমরা তাদেরকে মোবাইলের মাধ্যমে চিনি, তাদের অভিনয়গুলো দেখেও মানুষ তাদেরকে গালাগাল করছে, আর এই গালাগাল কিসের শুনছে শুনছে না তো তাহলে এটাও তো এক ধরনের গীবত, এটা হল ডিজিটাল গীবত যেটা আমরা পাত্তাই দিচ্ছি না।

 গীবত সম্পর্কে রাসূলের কঠোর নিসেজ্ঞ রয়েছে।
••• রাসুলুল্লাহ (সা.) সাহাবিদের জিজ্ঞেস করলেন, ‘গিবত কাকে বলে? তোমরা কি তা জানো?
উপস্থিত সবাই বললেন, ‘আল্লাহ আর তাঁর রাসুল (সা.) ভালো জানেন।’
রাসুলুল্লাহ (সা.) তখন বললেন, ‘জিকরুকা আখাকা বিমা ইয়াকরাহু।’ অর্থাৎ ‘গিবত হচ্ছে তোমার ভাইয়ের এমন কথা (দোষ) বর্ণনা করা, যা শুনলে সে অসন্তুষ্ট হবে।’ কারও অনুপস্থিতিতে অন্যের সামনে তার দোষ নিয়ে আলোচনা করাই গিবত।
সাহাবিরা প্রশ্ন করলেন, বর্ণনা করা দোষ যদি ওই ভাইয়ের (আলোচিত ব্যক্তিটির) মধ্যে থাকে, তাহলেও কি তা গিবত হবে?
রাসুল (সা.) বললেন, যদি তা সঠিক থাকে হয়; তবেই তা গিবত। অন্যথায় তা হবে অপবাদ। (মুসলিম, হাদিস: ৬৩৫৭; বুখারি, হাদিস: ৫৬১৩)


••• গিবত সম্পর্কে আল্লাহতালা কুরআনে অনেক কঠুর কঠোর আয়াত এ বলেছেন।

কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারোপ কোরো না। আর তোমরা একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না।’
 (সুরা হুজুরাত, আয়াত: ১২)
 গীবতের সাথে মন্দ নাম কে একত্রিত করা হয়েছে, কারণ মানুষ যখন একে অপরের সমালোচনা করে তার অবর্তমানে তখন তার সুন্দর নামটা বাদ দিয়ে অন্য আরেকটা একটা নামে তাকে ডাকে আর এটা ও একটা গীবত।

কোরআনে আরও আছে, দুর্ভোগ এদের প্রত্যেকের যে সামনে ও পেছনে লোকের নিন্দা করে, যে অর্থ জমায় ও বারবার তা গোনে, ভাবে যে এ অর্থ তাকে অমর করে রাখবে। কখনো না। তাকে তো ফেলা হবে হুতামায়। হুতামা কী, তুমি কি তা জান? এটা আল্লাহর প্রজ্বলিত হুতাশন, যা হৃৎপিণ্ডগুলোকে গ্রাস করবে, ওদেরকে বেঁধে রাখবে দীর্ঘায়িত স্তম্ভে। 
(সুরা হুমাজা, আয়াত: ১-৯)

 ছোটবেলা শুনতাম গ্রামের মানুষরা নাকি খুবই গীবত করে একে নিয়ে ওকে নিয়ে এর মেয়েকে নিয়ে ওর মেয়েকে নিয়ে, ছেলেকে নিয়ে ওর ছেলেকে নিয়ে ইত্যাদি
 মাশাল্লাহ শহরের মানুষরা খুবই স্মার্ট তারা একসাথে বসে গল্প না করলেও, তারা নিজেদের স্মার্টফোনের মাধ্যমে ঠিকই গীবত করে চলতেছে, আগেকার গ্রামের মানুষদের মত তাল মিলিয়ে, একটা অনলাইনে একটা অফলাইনে এতোটুকুই শুধু পার্থক্য।
 আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে গীবত থেকে হেফাজত করুন।আমীন 

Comments