মহরম মাস কেন এতো শ্রেষ্ঠ.! আশুরার রোয়া কি? মুসলমানরা কেন এই রোজা রাখে এবং আশুরার রোজা কয়টি রাখতে হয়..!
# মহরম মাসের গুরুত্ব।
# রোয়া রাখার প্রতি বিশেষভাবে গুরুত্ব।
# আশুরার আলোচনা।
#আশুরার রোজার ফজিলত।
#আশুরার দিন নিয়ে কিছু বর্জনীয় আমল।
#আশুরার দিনে বা রাতে বিশেষ সালাত সম্পর্কে কোনো হাদিস আছে কি- না..।
# আশুরা উপলক্ষে আমরা যা করতে পারি।
#আশুরায় দিনে অতীত ও ভবিষ্যত ঘটনাবলি নিয়ে অনেক বানোয়াট কথা সমাজের এপাশে ওপাশ ছড়িয়ে আছে।
আলহামদুলিল্লাহ আমরা বর্তমানে এ একটা পবিত্র মাসের মধ্যে আছি, যে মাসের নাম মহরম মাস আর এই মাসটা আমাদের আরবি হিজরী ও মাস হিসেবে গণনা করার ক্ষেত্রে প্রথম মাস।
*** মহরম মাসের গুরুত্ব :--
এই মহররম মাসের গুরুত্ব রয়েছে অনেক যেমন দুনিয়াতে অনেক ঘরসমূহের মধ্যে অন্যতম হলো বাইতুল্লাহ, বাইতুল্লার এতই মর্যাদা যে পৃথিবীতে হাজারো সৌন্দর্য বা ঐতিহ্য ঘর থাকার পরও এই বাইতুল্লাহই সবার যাওয়ার একটা শখ থাকেই যাই আলাদা, এখানে ইবাদাত করার স্বাদ ও ভিন্ন।
তেমনি এই মহররম মাসের ও গুরুত্ব রয়েছে এ মাসেই এবাদত করার ও এই মাসে নিজের গুনাহ সমূহ থেকে আল্লাহ তাঁয়ালা কাছে ক্ষমা চেয়ে নেওয়ার একটা সুযোগ আছে মুসলিম উম্মাহের জন্য।
মহররম একটি আরবি শব্দ, যার অর্থ "নিষিদ্ধ" বা "পবিত্র"।
এটি ইসলামি বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস এবং এই মাসে যুদ্ধ-বিগ্রহ নিষিদ্ধ। বিশেষ করে শিয়া মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে এই মাস শোকের মাস হিসেবে পালিত হয়, কারণ মহররম মাসের ১০ তারিখে কারবালা প্রান্তরে হজরত ইমাম হোসেন (রা.) শহীদ হয়েছিলেন।
•• পবিত্র কোরআনুল কারিম ও হাদিস শরিফে এ মাসকে অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ বলা হয়েছে। কোরআনের ভাষায় এটি সম্মানিত চার মাসের (‘আরবাআতুন হুরুম’) অন্যতম। এ মাসে বেশি বেশি নফল রোজা ও তওবা ইস্তিগফারের প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে।
বৎসরের চারটি ‘হারাম’ মাস রয়েছে সেগুলো হলো :--মুহার্রাম, রজব, যিলকাদ ও যুলহাজ্জ মাস।
এ মাসগুলো ইসলামী শরীয়তে বিশেষভাবে সম্মানিত।
এগুলোতে ঝগড়াঝাটি বা যুদ্ধবিগ্রহ নিষিদ্ধ। আল্লাহ বলেছেন: ‘‘আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টির দিন হতেই আল্লাহর বিধানে আল্লাহর নিকট মাস গণনায় মাস বারটি, তন্মধ্যে চারটি নিষিদ্ধ মাস। এটি সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান। সুতরাং এ নিষিদ্ধ মাসগুলোর মধ্যে তোমরা নিজেদের প্রতি জুলুম করো না..!
*** এছাড়াও এই মাসে আমাদেরকে রোয়া রাখার প্রতি বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত এক হাদীসে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘রমযানের পর আল্লাহর মাস মুহাররমের রোযা হল সর্বশ্রেষ্ঠ।’
أفضل الصيام بعد رمضان شهر الله المحرم
-সহীহ মুসলিম ২/৩৬৮; জামে তিরমিযী ১/১৫৭
এর মধ্যে আশুরার রোযার ফযীলত আরও বেশি।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রমযান ও আশুরায় যেরূপ গুরুত্বের সঙ্গে রোযা রাখতে দেখেছি অন্য সময় তা দেখিনি।’
ما رأيت النبي صلى الله عليه وسلم يتحرى صيام يوم فضله على غيره إلا هذا اليوم يوم عاشوراء وهذا الشهر يعني رمضان
-সহীহ বুখারী ১/২১৮
হযরত আলী রা.কে এক ব্যক্তি প্রশ্ন করেছিল, রমযানের পর আর কোন মাস আছে, যাতে আপনি আমাকে রোযা রাখার আদেশ করেন? তিনি বললেন, এই প্রশ্ন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট জনৈক সাহাবী করেছিলেন, তখন আমি তাঁর খেদমতে উপসি'ত ছিলাম। উত্তরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘রমযানের পর যদি তুমি রোযা রাখতে চাও, তবে মুহররম মাসে রাখ। কারণ, এটি আল্লাহর মাস। এ মাসে এমন একটি দিন আছে, যে দিনে আল্লাহ তাআলা একটি জাতির তওবা কবুল করেছেন এবং ভবিষ্যতেও অন্যান্য জাতির তওবা কবুল করবেন।
(তিরমিযী ১/১৫৭)
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, রমজানের রোজার পর সবচেয়ে উত্তম রোজা হলো মহররম মাসের রোজা।’
(মুসলিম)
এ সব ঘটনার দ্বারা এটা প্রমাণিত হয় যে মহরম মাসে আমাদের জন্য বিশেষ সুবিধা রয়েছে আমলের আর আমরা এই আমলগুলো করার মাধ্যমে নিজেদের আখেরাতকে আরো সুন্দর ও পরিপাটি করে নিতে পারব দুনিয়াতে থেকেই।
*** এবার আসি কিছু মানুষের প্রশ্ন আর আশুরা সম্পর্কে কিছু আলোচনা নিয়ে..!
••• আশুরা মূলত কি?
মহররম মাসের ১০ম দিনকেই বলা হয় আশুরা,
এ দিন আল্লাহ তায়ালা হজরত মুসা আলাইহিস সালাম এবং তাঁর জাতিকে ফেরাউনের জুলুম থেকে মুক্তি দিয়েছেন। এ উপলক্ষ্যে ইসলামের আগমনের আগে থেকেই ইয়াহুদিরাও রোজা রাখতেন,
আর টাকেই মূলত আশুরার রোজা বলা হতো.!
কিন্তু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মদিনায় হিজরতের পর দেখেন ইয়াহুদিরা এদিন রোজা পালন করছে। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আমরা হজরত মুসা আলাইহিস সালামের অনুসরণ করার ব্যাপারে তোমাদের চেয়ে অধিক হকদার। তিনি নিজে সেই (আশুরার) দিনের রোজা পালন করলেন এবং সাহাবাদেরকেও (এই আশুরার দিন রোজা) নির্দেশ দিলেন।’
(বুখারি)
••• আশুরার রোজার ফজিলতহ হলো :--
আশুরার রোজা রাখার ফজিলত অনেক বেশি। এ দিনের রোজা রাখার ফজিলত বর্ণনায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘আল্লাহর কাছে আশা করি তিনি বিগত এক বছরের গোনাহ ক্ষমা করে দেবেন।’
(মুসলিম)
••• এই মাসে আমরা আশুরার রোজা ছাড়া ও সুজোগ নফল রোয়া রাখার চেষ্টা করবো বেশি বেশি, নিজেরা তেমন রোজা রাখতে না পারলেও যারা রোজা রাখে বলে মনে হয় তাদেরকেও উৎসাহিত করবো এ মাসে নফল রোজা রাখার জন্য।
শুধু আশুরার একদিনের একটা রোজা রাখার ব্যাপারে ইহুদি ও খ্রিস্টানরা বেশি সম্মান প্রদর্শন করে থাকে। তাই অন্য এক হাদিসে রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহররমের ১০ তারিখের রোজার সঙ্গে ৯ অথবা ১১ তারিখকে মিলিয়ে রোজা রাখতে বলেছেন। একদিন রোজা রাখা মাকরুহ।
(ফাতাওয়ায়ে শামী,৩য়-খ-পৃ.৩৩৫)
•• রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইয়াহুদিদের অনুসরণ করতে নিষেধ করেছেন। আশুরা উপলক্ষে ইয়াহুদিরা ১ দিন (আশুরার) রোজা রাখতো। সে কারণে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইয়াহুদিদের ব্যতিক্রম করতে বলেছেন।
যেহেতু এ দিন ইয়াহুদিরাও রোজা রাখে সে কারণে তাদের ব্যতিক্রমস্বরূপ ৯ মুহররমও রোজা পালন করা উচিত। কেননা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমি যদি আগামী বছর বেঁচে থাকি তাহলে ৯ এবং ১০ মহররম দুই দিনই রোজা রাখবো।’
(মুসলিম)
আশুরা দিন পালন করার ক্ষেত্রে অনেকের অনেক ধরনের কথা ও সংস্কার পালন করে করে, যেটা কতটুকু যুক্তিযুক্ত আদৌ ঠিক কিনা সে ব্যাপারে তারা জ্ঞান রাখেনা তারা তাদের অঞ্চলে যেরকম পরিবেশ দেখে বড় হয়েছে তারা সেটাকেই ইসলাম বলে মেনে নেই, অবশ্য তাদেরও খুব বেশি দোষ বা ভুল তেমন বলা যায় না, তা ও বর্তমানে যেহেতু সকলেই সবকিছুর জ্ঞান রাখতে চাই অল্প হলে ও অজানা বিষয়গুলো জানার চেষ্টা করে, সে অনুযায়ী এ কথা বলা যে প্রত্যেকটা আমল করা তবে আগে জেনে নেওয়াই ভালো একটু কষ্ট করে হলেও বই পড়া, বা কারো পোস্ট সম্পর্ণ ভালো ভাবে পড়া এবং নিজে জানা ও অপরকে জানানো, না-জেনে আমল করার থেকে জেনে আমল করা উত্তম।
আর নিজে সঠিকটা জেনে ওপরকে ও জানানো এটা আরো সওয়াবের কাজ কারণ নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহিসাল্লাম বলেছেন :-- আমার পক্ষ হইছে একটি বাণী হলেও পোঁছাইয়া দাও।
(অর্থাৎ সঠিক আমল ও হাদিস সহীহ কতটা সেটা আগে নিজে ভালো করে জেনে অন্যকে ও দাওয়াত দেওয়ার আমল এর বেপারে )।
*** আশুরার দিন নিয়ে কিছু বর্জনীয় আমল যা আমাদের মাঝে থাকলে এগুলো থেকে বিরত থাকতে হবে ও আমাদের আসে পাশে মানুষকে বিরত রাখতে হবে:--
ইসলামের প্রথম যুগে মুসলিমগণ এগুলো সত্য বা মিথ্যা বলে বিশ্বাস না করে ইসরাঈলী কাহিনী হিসাবেই বলেছেন।
কিন্তু পরবর্তী যুগে তা ‘হাদীসে’ পরিণত হয়ে গেছে কারণ এটা ধীরে ধীরে মানুষ খুব শক্ত করে আগড়ে ধরার চেষ্টা করতে লাগলো কারণ তখন কিছু মানুষ বলতো সে এটা একটা কাহিনী কিন্তু আর কিছু মানুষ বলতে চাইতো এটা কোনো কাহিনী না এইভাবে আজ ও এই অনেক অঞ্চলও মানুষের মাঝে এই দিন হয়ে আছে স্মরণইয় হিসেবে..!
আমি আমার নানার বাড়ির কিছু আত্মীয় সূত্রে দেখা, মহররম মাস আসলে বিশেষ করে যেদিন আশুরার দিন হয় সে দিন তারা সকলে একত্রিত হয়ে অর্থাৎ মহিলারা মহিলাদের সাথে আর পুরুষেরা পুরুষদের সাথে বড় টিভিতে একসাথে বসে তারা কারবালার কাহিনী দেখে আর নিজেরাও খুবই আপসেট হয়, হ্যাঁ এই দিনটা সম্মান করা ঠিক আছে, রোজা রাখাটাও ঠিক আছে, কিন্তু এভাবে একত্রিত হয়ে হাই হুতাশ করা তো একেবারে অনুচিত মনে হয় আমার কাছে।
কারণ আমাদের হাই-হোতাশ দিয়ে এই দিনের সম্মান প্রকাশ হবে না কখনো।
এই দিনটিকে আবার অনেকে শুধু কারবালার মাতক ও শোকানুষ্ঠান হিসেবে উদযাপন করে থাকে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রিয় নাতি হজরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুর হৃদয়বিদারক শাহাদাত দিবস হিসেবে শরীরে আঘাত করতে থাকে, আবার শরীর রক্তাক্ত করতে থাকে, তাজিয়া মিছিল তথা যুদ্ধের সাজ সাজ পোশাকে ঘোড়া সাজিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ে। হজরত হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু কৃত্রিম মাজার তৈরি করে রাস্তায় প্রদর্শণীতে নেমে পড়ে ইত্যাদি অনেক কাজের মধ্যে লিপ্ত হয়ে পড়ে অনেক মুসলমান যদি ও--
আশুরা উপলক্ষ্যে এসব আয়োজন ও আমল বর্জন করা।
কারণ এমন কোন আমলের ব্যাপারে ইসলামের কোনো অনুমোদনই নেই।
•• দ্বিতীয় বিষয় হলো রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর ইন্তিকালের অর্ধ শতাব্দী পরে ৬১ হিজরীর মুহার্রাম মাসের ১০ তারিখে আশূরার দিনে তাঁর প্রিয়তম নাতি হুসাইন (রা) কারবালার প্রান্তরে শহীদ হন। এ ঘটনা মুসলিম উম্মাহর মধ্যে চিরস্থায়ী প্রভাব বিস্তার করে। হুসাইন (রা)-এর পক্ষের ও বিপক্ষের অনেক বিবেকহীন দুর্বল ঈমান মানুষ ‘আশূরার’ বিষয়ে অনেক ‘হাদীস’ বানিয়েছে।
কেউ দিনটিকে ‘শোক দিবস’ হিসেবে এবং কেউ দিনটিকে ‘বিজয় দিবস’ হিসেবে পালনের জন্য নানা প্রকারের কথা বানিয়েছেন।
তবে মুহাদ্দিসগণের নিরীক্ষা পদ্ধতিতে এ সকল জালিয়াতি ধরা খুবই সহজ ছিল।
*** মহার্রাম ও আশূরা সম্পর্কে এজাতীয় প্রচলিত কথাবার্তাকে আমরা দু ভাগে ভাগ করতে পারি:--
••• যে সকল ‘হাদীস’ কোনো কোনো মুহাদ্দিস জাল বা বানোয়াট বলে উল্লেখ করলেও, কেউ কেউ তা দুর্বল হিসাবে গ্রহণ করেছেন--
এবং যে সকল ‘হাদীস’ অত্যন্ত দুর্বল সনদে কোনো কোনো সাহাবী বা তাবিয়ী থেকে তাঁর নিজের বক্তব্য হিসেবে বর্ণিত হয়েছে।
বাহ্যত ইসরাঈলী বর্ণনার ভিত্তিতে তাঁরা এগুলি বলেছেন।
••• সকল মুহাদ্দিস যে সকল হাদীসকে ‘জাল’ ও ভিত্তিহীন বলে একমত পোষণ করেছেন। এখানে আমরা প্রথম পর্যায়ের কিছু হাদীস ও মতামত উল্লেখ করার চেষ্টা করছি যেমন :--
মুহার্রাম মাসের কোনো দিবসে বা রাত্রে এবং আশুরার দিবসে বা রাত্রে কোনো বিশেষ সালাত আদায়ের কোনো প্রকার নির্দেশনা বা উৎসাহ কোনো হাদীসে বর্ণিত হয় নি।
এ বিষয়ক সকল কথাই বানোয়াট। আমাদের দেশে প্রচলিত কোনো কোনো পুস্তকে মুহার্রাম মাসের ১ম তারিখে দুই রাক‘আত সালাত আদায় করে বিশেষ দোয়া পাঠের বিশেষ ফযীলতের বিবরণ দেয়া হয়েছে। এগুলো সবই বানোয়াট ও ভিত্তিহীন।
*** আশুরার দিনে বা রাতে বিশেষ সালাত সম্পর্কে কোনো হাদিস আছে কি- না..?
উত্তর:-- আশুরার সিয়ামের উৎসাহ দেয়া হলেও, হাদীসে আশুরার দিনে বা রাত্রে কোনো বিশেষ সালাত আদায়ের বিধান দেওয়া হয় নি।
তবে জালিয়াতগণ অনেক কথা বানিয়েছে। যেমন, যে ব্যক্তি আশুরার দিবসে যোহর ও আসরের মধ্যবর্তী সময়ে অথবা আশুরার রাত্রিতে এত রাকআত সালাত অমুক অমুক সূরা এতবার করে পাঠ করবে সে এত পুরস্কার লাভ করবে। সরলপ্রাণ মুসলিমদের মন জয় করার জন্য জালিয়াতগণ এ সকল কথা বানিয়েছে, যা অনেক সময় অনেক সরলপ্রাণ মানুষ ও অনেক বড় আলিম ও বুযুর্গকেও ধোঁকা দিয়েছে।
**** আশুরায় দিনে অতীত ও ভবিষ্যত ঘটনাবলি নিয়ে অনেক বানোয়াট কথা সমাজের এপাশে ওপাশ ছড়িয়ে আছে এখনো যেমন :--
মিথ্যাবাদীরা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নামে জালিয়াতি করে বলেছে অনেক কথা,
••• আশুরার দিনে আল্লাহ আসমান ও যমিন সৃষ্টি করেছেন।
••• এ দিনে তিনি পাহাড়, পর্বত, নদনদী.... সৃষ্টি করেছেন।
••• এ দিনে তিনি কলম সৃষ্টি করেছেন।
••• এ দিনে তিনি লাওহে মাহফূয সৃষ্টি করেছেন।
••• এ দিনে তিনি আরশ সৃষ্টি করেছেন।
••• এ দিনে তিনি আরশের উপরে সমাসীন হয়েছেন।
••• এ দিনে তিনি কুরসী সৃষ্টি করেছেন।
••• এ দিনে তিনি জান্নাত সৃষ্টি করেছেন।
••• এ দিনে তিনি জিবরাঈলকে (আঃ) সৃষ্টি করেছেন।
••• এ দিনে তিনি ফিরিশতাগণকে সৃষ্টি করেছেন।
••• এ দিনে তিনি আদমকে (আঃ) সৃষ্টি করেছেন।
••• এ দিনে তিনি আদমকে (আঃ) জান্নাতে প্রবেশ।
••• এ দিনে তিনি আরশের উপরে সমাসীন হয়েছেন।
••• এ দিনে তিনি কুরসী সৃষ্টি করেছেন।
••• এ দিনে তিনি জান্নাত সৃষ্টি করেছেন।
••• এ দিনে তিনি জিবরাঈলকে (আঃ) সৃষ্টি করেছেন।
••• এ দিনে তিনি ফিরিশতাগণকে সৃষ্টি করেছেন।
••• এ দিনে তিনি আদমকে (আঃ) সৃষ্টি করেছেন।
••• এ দিনে তিনি আদমকে (আঃ) জান্নাতে প্রবেশ করিয়েছেন।
••• এ দিনে তিনি ইদরীসকে (আঃ) আসমানে উঠিয়ে নেন।
••• এ দিনে তিনি নূহ (আঃ)-কে নৌকা থেকে বের করেন।
••• এ দিনে তিনি দায়ূদের (আঃ) তাওবা কবুল করেছেন।
••• এ দিনে তিনি সুলাইমান (আঃ)-কে রাজত্ব প্রদান করেছেন।
••• এ দিনে তিনি আইঊব (আঃ)-এর বিপদ-মসিবত দূর করেন।
••• এ দিনে তিনি তাওরাত নাযিল করেন।
••• এ দিনে ইবরাহীম (আঃ) জন্মগ্রহণ করেন... খলীল উপাধি লাভ করেন।
••• এ দিনে ইবরাহীম (আঃ) নমরূদের অগ্নিকুন্ডু থেকে রক্ষা পান।
••• এ দিনে ইসমাঈল (আঃ) কে কুরবানী করা হয়েছিল।
••• এ দিনে ইউনূস (আঃ) মাছের পেট থেকে বাহির হন।
••• এ দিনে আল্লাহ ইউসূফকে (আঃ) জেলখানা থেকে বের করেন।
••• এ দিনে ইয়াকুব (আঃ) দৃষ্টি শক্তি ফিরে পান।
••• এ দিনে ইয়াকূব (আঃ) ইউসূফের (আঃ) সাথে সম্মিলিত হন।
••• এ দিনে মুহাম্মাদ (ﷺ) জন্মগ্রহণ করেছেন।
•• এ দিনে কেয়ামত সংঘঠিত হবে....।
••• আবার কেউ কেউ বানিয়েছে: মুহার্রামের ২ তারিখে নূহ (আঃ) প্লাবন হতে মুক্তি পেয়েছেন, ৩ তারিখে ইদরীসকে (আঃ) আসমানে উঠানো হয়েছে, ৪ তারিখে ইবরাহীমকে (আঃ) অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপ করা হয়েছে, ইত্যাদি ইত্যাদি।
এরূপ অগণিত ঘটনা এ মাসে বা এ দিনে ঘটেছে এবং ঘটবে বলে উল্লেখ করেছে জালিয়াতরা তাদের এ সকল কল্প কাহিনীতে।
মোট কথা হলো, আশুরার দিনে মূসা (আঃ) ও তাঁর সাথীদের মুক্তি পাওয়া ছাড়া আর কোনো ঘটনা সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়।
আদমের (আঃ) এর তাওবা কবুল, নূহ (আঃ) এর নৌকা জূদী পর্বতের উপর থামা ও ঈসা (আঃ) জন্মগ্রহণ করার কথা অনির্ভরযোগ্য সূত্রে কোনো কোনো সাহাবী-তাবিয়ী থেকে বর্ণিত।
আশুরা বা মুহার্রাম সম্পর্কে আর যা কিছু বলা হয় সবই মিথ্যা ও বাতিল কথা।
দুঃখজনক হলো এটাই সত্যি যে,
আমাদের সমাজে মুহার্রাম বা আশূরা বিষয়ক বই পুস্তকে, আলোচনা ও ওয়াযে এ সমস্ত ভিত্তিহীন কথাবার্তা উল্লেখ করে থাকেন ।
*** তবে আশুরা উপলক্ষে আমরা যা করতে পারি তাহলো :--
এদিন আমরা রোয়া ও ইবাদত-বন্দেগির পাশাপাশি হজরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুর স্মরণে তার জীবন ও কর্ম শীর্ষক আলোচনা সভা করতে পারি এবং সেখানে তাঁদের আমল ও চরিত্র সম্পর্কে আলোচনা করতে পারি এর দ্বারা যাতে মানুষ হেদায়েত পায়, এবং মেয়েদের চরিত্র কে তাদের সাথে মিলানোর চেষ্টা করে ।
কারবালার প্রান্তরে শাহাদাতবরণকারীদর জন্য দোয়ার অনুষ্ঠানও করা যেতে পারে। ইসলামের এই বিজয়ের জন্য তাদের যে কতো ত্যাগ ও অবদান ছিলো তা সকল মুসলিমদের সামনে আবারো তুলে ধরা এবং মুসলিম উম্মাহর মাঝে শহীদ ও যুদ্বের অনুপ্রেরণা জাগিয়ে তোলা।
পরিশেষে একটাই দোয়া..,
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকল মুসলিম উম্মাহকে মহররম মাসের মর্যাদা রক্ষার এবং আশুরার ৯ ও ১০ তারিখ বা ১০ ও ১১ তারিখের রোজা তাওফিক দান করুণ।
এবং ইসলামের আশুরা ও মহরম মাসের সঠিক ঘটনার আলোচনা ও কুরআন-সুন্নাহর ওপর যথাযথ জেনে সকলকে আমল করার তাওফিক দান করুন...আমিন
সুম্মা আমীন........,
Comments
Post a Comment