একটু আগের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ঠিক করা মানুষটারও একটু পরে হয়ে যাই স্মৃতি..!(উত্তরায় মাইলস্টোন কলেজ ক্যাম্পাসে)
হাজারো দুর্ঘটনার মাঝে এমন কিছু ঘটনা থাকে আসলেই যেটা সবার মনকেই আহত করে। যেমন দুনিয়াতে আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টির মাঝে অনেক মানুষ আছে যাদের অনেক কিছু না থাকলেও বেঁচে থাকার মত কিছু আশা থাকে ধরুন একজন মানুষ তার পা নেই কিন্তু তার অনেক স্বপ্ন আছে তাহলে সে পা না থাকা সত্ত্বেও তার স্বপ্নকে পূরণ করতে পারে বা কোন একটা মাধ্যমে পূরণ করা সম্ভব, আবার দেখা যায় অনেকের কিছুই নেই অর্থাৎ টাকা পয়সা তারও আশা থাকে যে সে একসময় অনেক টাকা পয়সা ইনকাম করবে হয় সে নিজে না হয় ছেলেমেয়েকে মানুষের মতো মানুষ করে ভালো কোন পজিশনে নিয়ে গেলে, তখন হয়তো তাদের অনেক টাকা পয়সা হওয়ার আশা থাকে, অথবা কারো সন্তান নেই তাহলে সে সন্তানের আশা করে, বা কারো একটাই সন্তান আছে তাহলে সেও ওই সন্তানটাকে ভালোভাবে বড় করার স্বপ্ন নিয়ে দুনিয়াতে বেঁচে থাকে।
আকাশের সৌন্দর্য যেমন তারকা রাজি, তেমন জমিনের সৌন্দর্য শিশুরা।
আর একটা পরিবারের সৌন্দর্য বা পরিপূর্ণ তা হল তার সন্তান।
একটা পরিবার এর কর্তা তার জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত নিজ পরিবারের পিছনে ব্যয় করেন, সন্তানদের ভালো পড়া-লেখা,ভালো পরিবেশে রাখতে পারা, তাদের স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করা,তাদের ভবিষ্যৎটা উত্তমভাবে তাদেরকে উপহার হিসেবে দিতে পারা একটা স্বপ্ন হয়ে যাই তার কাছের।
তবে কষ্টটা তখন হয়, যখন সব ইচ্ছা আর সমার্থক থাকা সত্ত্বেও তার সন্তানকে উত্তম ভাবে কিছুই দিতে পারে না..! অর্থাৎ স্বপ্নের সিঁড়িগুলো মাঝপথে ভেগে যায়..!
আল্লাহ তায়ালা তো বলে দিয়েছেন যে সন্তান হল মা বাবার কাছে দুনিয়াতে একটা আমানত..!
কেউ যখন কারো কাছে কোন জিনিস আমানত রাখে, আর যখন সে জিনিসটা তার প্রয়োজন হয় তখন যদি মালিক খুঁজতে আসে তখন জিনিসগুলা তাকে দিয়ে দেওয়া. আর আমানতের জিনিসের জন্য কখনো আফসোস না করা.!
জানি হয়তোবা আমি লিখতে পারতেছি বা আপন জনের মৃত্যুতে তারা এই আমানত বিষয়টা খুব সহজে মানতে পারেনা, আর এটা আসলেই খুব কষ্টের..!
এত মায়া এত টান কিভাবে ত্যাগ করা যাই,অল্প সময়ে, যাদেরকে এক পলক না দেখলে সময় কাটে না, আল্লাহ তায়ালার এমন একটা নিয়ম ঠিক একসময় তাদেরকে ছাড়াই জীবন পার করার, আল্লাহতালা আমাদেরকে বোঝায় দুনিয়াতে আমরা মেহমান, কিছুদিনের জন্য থাকার জায়গা ঠিক কখন কোন মুহূর্তে আমাদেরকে নিয়ে যাবে সেটা একমাত্র আল্লাহ তায়ালাই জানেন, আমি আপনি এখানে মাতব্বরি করতে পারবো না।
আল্লাহ তাআলা কোরআনে বলেছেন যে মৃত্যু থেকে পালানোর কোনো উপায় নেই এবং প্রতিটি মানুষের জীবনে মৃত্যু অবধারিত। মৃত্যুর সময় আল্লাহ নির্ধারণ করে রেখেছেন এবং প্রতিটি মানুষকেই তার নির্ধারিত সময়ে মৃত্যুবরণ করতে হবে।
*** তবে আমাদেরকে কথা বলার ক্ষেত্রে খেয়াল করতে হবে যে কথার মাঝে ও যেনো আমরা কুফরি কথা না বলি.! যেমন অকাল মৃত্যু বা মিথ্যে সাথে পাঞ্জা লড়া ইত্যাদি কথা সেগুলো একজন মুসলিম কখনো বলতে পারেনা।
ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে মৃত্যু একটি অনিবার্য বাস্তবতা।
কুরআনে আল্লাহ বলেছেন, “তোমরা যেখানেই থাক না কেন, মৃত্যু তোমাদেরকে পাকড়াও করবে, এমনকি সুউচ্চ সুদৃঢ় দুর্গে অবস্থান করলেও”। অর্থাৎ, মৃত্যু থেকে বাঁচার কোনো উপায় নেই। মৃত্যু সকলের জন্য নির্দিষ্ট এবং নির্ধারিত সময়েই আসবে। যখন যে মুহূর্ত মানুষের মৃত্যু নির্ধারিত ছিলো তখন তাকে সে সময় অবশ্যই আল্লাহর ডাকে সাড়া দিতে হবে। সে যদি সিংহাসন এ বসে থাকতো তাহলেও তাকে আল্লাহর ডাকে সাড়া দিতে হতো।
কুরআনের অন্যত্র আল্লাহ বলেন, “প্রত্যেক আত্মাকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। অতঃপর তোমরা আমারই নিকট প্রত্যাবর্তিত হবে।” সুতরাং, মৃত্যুর পর আমাদের আল্লাহর কাছে ফিরে যেতে হবে। এটা দুনিয়া, আজকে যারা আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়েছে তারা তাদের হায়াতকে পরীপূর্ণ করেই গেছেন, আমি আপনি ও আমাদের হায়াত শেষ হলে অবশ্যই আল্লাহর ডাকে সাডা দিবো তাই নিজের জীবনকে নিজের মন মতো করে পরিচিত না করে আল্লাহর দেওয়া আদেশ নিষেধ মতো পরিচালিত করা।
ইসলামে, অকালমৃত্যু বলে কিছু নেই। প্রত্যেক মানুষের জীবন ও মৃত্যু আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত। যখন কারো মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে আসে, তখন তার মৃত্যু অনিবার্য।
হ্যাঁ পারবো কিছু সাময়িক দোষারোপ করতে।
যেমন..,
আজকে উত্তরায় মাইলস্টোন কলেজ ক্যাম্পাসে
বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি এফ-৭ বিজিআই প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনা।
মাইলস্টোন কলেজ সংলগ্ন মাঠে ‘এফ-৭ বিজিআই’ মডেলের প্রশিক্ষণ বিমানটি যখন বিধ্বস্ত হয়। ওই সময় স্কুল শাখায় প্রথম শ্রেণি থেকে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত ক্লাস চলমান ছিল।
হঠাৎ বিকট শব্দে বিমানটি ভেঙে পড়লে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। খবর পেয়ে ছুটে আসেন অভিভাবকরাও।
এ দুর্ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন নোবেল বিজয়ী ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
এই ঘটনাটা যখন চোখের সামনে আসলো তখন মাথায় একটা কথাই ঘুরপাক খাচ্ছে তা হলো আমরা মেয়েরা যখন রান্না করতে রান্না ঘরে যাই, মাঝে মাঝে হয় কি তেলের ছিটা বা চুলার কিছু আগুনের অংশ আমাদের দিকে চলে আসে বা আমরা এতে আহত হই, অনেকের হাত পড়ে মুখ পুড়ে বা চুল পুড়ে আবার অনেকের তেলের ছিটা গায়ে পড়ে বা পায়ে পড়ে ইত্যাদি হতে পারে।
প্রতিনিয়ত রান্না করার ক্ষেত্রে অনেকে এগুলোতে অভ্যস্ত হয়ে যায় হালকা পাতলা পুরাতে তেমন অসুবিধা হয় না। কিন্তু যখন আগুন চামড়ার গভীরে ঢুকে যায় তখন বোঝা যাই আগুনের ছোট্ট একটা শিখাও কতটা নির্মম হতে পারে!
কিছুদিন আগে আমি হঠাৎ রান্না ঘরে মাছ ভাজতে গিয়ে তেলের ছিটা এসে পরে আমার হাতে, সাথে সাথেই ঠোসা পড়ে যায়, এই ঠসা নিয়ে গোসল করা, বিভিন্ন কাজ করা, বা কাজ করার ক্ষেত্রে হঠাৎ করেই সেই ব্যথার জায়গায় হাত লাগা আর সে কষ্টটা অনুভব করা, এই সময়ে কতটা কষ্ট হয় যাদের অনেক বেশি পুরেছে তারাই একমাত্র জানে..!
পুড়ে যাওয়ার জ্বালা শুধু ত্বকে নয় থেকে যায় মনের ভেতরও। সেই ঘা শুকোতে সময় লাগে কতোটা।
ফোস্কা বা ঠোসা পড়ে যাওয়ার পরের প্রতিটা দিন শুধু একটাই অনুভূতি হয়, জাহান্নামের আগুনকে শতবার ধুয়ে দুনিয়াতে অল্প একটু আগুন দিয়েছেন আল্লাহ তাঁয়ালা, আর এই আগুনের সামান্য সেটাটাও সহ্য করতে পারছি না, আমরা কিভাবে আল্লাহ তায়ালার অবাধ্য হই, অবাধ্যদের জন্য যে আজাব রয়েছে, সেখানে তো এই আগুন না আরো শত গুণ আগুনএর তাপ বৃদ্ধি থাকবে..! হে আগুনের তাপমাত্রা কিভাবে আমাদের এই শরীরে সহ্য করবে.??
মাইলস্টোন কলেজের ঘটনাটা আবারো মনুষকে মাথায় হাত রেখে ভাবতে বাধ্য করল- এ শহরে বেঁচে থাকা স্রেফ ভাগ্যের বিষয় হয়ে উঠেছে প্রত্যেকের কাছে..!
আজকের এই ঘটনার এই আগুনে শুধু একটা প্লেন শেষ করেনি! শেষ করেছে অনেকের অনেক বড় বড় কত স্বপ্ন..!
জীবন এর কত সুন্দর গল্প, কতো জনের কতো হাসি.!
নিজের সন্তান হারানো মানুষগুলোর কান্না আর হাসপাতালের বারান্দায় অপেক্ষা করা আত্মীয় ও শোকে পাথর হওয়া চোখগুলো—সব মিলিয়ে শহরটা যেন একদিনে মৃত্যুর নগরীতে পরিণত হয়েছিলো।
এই শহরের প্রতিটি ধোঁয়া যেন কারও না কারো নিঃশেষ হওয়া শ্বাস ও আহাজারি..।
ঘটনাস্থলে আগুন নিভলো ঠিকই, কিন্তু কিন্তু স্বজন হারানো ও সন্তান হারানো যে যন্ত্রণার আগুন তা আর কখনো নিভবে না।
শহরের বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে ধোঁয়া, দগ্ধ মানুষের আর্তনাদ আর শূন্যতার গন্ধে।
প্রতিবার শ্বাস নিতে গিয়ে মনে হচ্ছে- এই শহরে প্রতিটা সেকেন্ডে যেনো কেন না কোনো মানুষ শুধু বেঁচে থাকার জন্য লড়াই করেই চলছে..!
নিরাপত্তাহীনতা, অব্যবস্থা আর অবহেলার অন্ধকারে ঢাকা পড়ে আছে সবকিছু..!
কেউ দিতে না পেরে মৃত্যুবরণ করছে, আবার কেউ হেসেও মৃত্যু বারণ করছে, কেউবা ধর্ষণ হয়ে প্রাণ হারাচ্ছে, কেউ আবার তার মা বাবাকে কাঠগড়ায় দাড়া করাচ্ছে, কেউবা বেড়াতে গিয়ে নির্যাতিত হচ্ছে, কেউবা কথার মাঝে কথা বলতে গিয়ে ও মৃত্যুবরণ করছে, কেউবা আবার শিক্ষালয়ে ও দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছে কেউবা আবার আহত হয়েও প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে বেঁচে থাকার আশায় নতুন আরেকটা দিন দেখার জন্য দোয়া করছে।
হে আল্লাহ, এই আগুন যেন আর কখনো কোনো মায়ের বুক খালি না করে, আর কোনো সন্তানের হাসি নিভিয়ে না দেয়, আর কোনো শিক্ষার্থীর, শিক্ষকের বা কর্মজীবী মানুষের স্বপ্নকে থামিয়ে না দেয় ।
হে আল্লাহ দোয়া করা ছাড়া তো আমাদের মত সাধারন মানুষদের আর কিছুই করার নেই।
আপনি যাদের থেকে আপনার আমানত উঠিয়ে নিয়েছেন, তাদের মা বাবা ও আত্মীয়দের অন্তরে আপনি ধৈর্য ধরার তৌফিক দান করেন, আর যাদেরকে আপনি নিয়ে গেছেন তাদেরকে জান্নাতুল ফেরদৌসের উচ্চতম স্থানে দান করুণ।আর যারা এখনও জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে আছে তাদেরকেও আপনি সুস্থতা দান করুণ।
আমীন.......!
Comments
Post a Comment