আমাদের সমাজের কিছু কুসংস্কারই কথা বাস্তবে যার কোন যুক্তি বা ভিত্তি নেই.!




কুসংস্কার বলতে মানুষের কিছু ভিত্তিহীন মনগড়া কথা, এবং অযৌক্তিক বিশ্বাস যা মানুষ মানুষের কথা থেকেই প্রচার করে, এবং পরে থাকে সত্যরূপে মেনে নেয়।

যা কোনো বিজ্ঞান বা যুক্তির ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত নয়। 

এই কুসংস্কারের কারণে কঠিন হয়ে পড়ে অনেক মানুষের জীবন, জীবনের অনেক ভালো ভালো মুহূর্তে সিদ্ধান্ত নিতে ও দ্বিধা দ্বন্দ্বে পড়ে যায়, ছুটি সময়ে সঠিক যুক্তিসঙ্গত সিদ্ধান্ত নিতে পারে না, এবং তাদের জীবনযাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে অনেক সহজ বিষয়কেও জটিল করে ফেলে। 

 কুসংস্কার মানুষকে অন্ধের দিকে ঠেলে নিয়ে যায়, তার সঠিক যুক্তি ও সঠিক চিন্তা থেকে দূরে সরিয়ে নেই, এমনকি অনেক মানুষকে কুসংস্কার মানসিক রোগী ও বানিয়ে ফেলতে সক্ষম, কারণ মানুষের অর্ধেক মানসিক সমস্যা হয় তার ভিতরে গত চিন্তা ও বিবেচনা থেকে, মানুষ যেরকম যে বিষয়টাকে চিন্তা করে ঠিক বাস্তবেও সে সেটা করারই চেষ্টা করে।

 আমাদের সমাজে এমন কিছু কুসংস্কার রয়েছে, যা আমরা ছোট থেকে যখন বুঝদার হয়েছে তখন থেকে শুনে আসছি, আর এমন চিন্তা ধারা বা কথা জন্ম থেকে প্রজন্ম এখন পর্যন্ত চলে আসছে, কথাগুলো যদিও সঠিক না মানুষ জানে তাও এই কথার উপর বিশ্বাস অটল রাখে, কারণ ঐ যে বুঝ হওয়ার পর থেকে এমন কথা শুনে আসছে।

তাই এই কুসংস্কার দূর করে  আমাদের ও আমাদের সমাজ ব্যবস্থাকে আরো উন্নত ও সুস্থ স্বাভাবিক করতে হলে  শিক্ষার প্রসার করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। 

মানুষকে যুক্তিবাদী হতে উৎসাহিত করা ও তাদেরকে সঠিক টা জানাতে হবে, পাশাপাশি ভুলটাও তাদেরকে ধরিয়ে দিতে হবে। 

*** আমাদের কিছু কুফরি বাক্য যা আমরা নিয়মিত বলে থাকি, এমন কিছু কথা যা মুসলমানদের জন্য অনেক সময় ব্যবহার করাও হারাম..! যেমন:--

••• আল্লাহও লাগে ইল্লাও লাগে।

(নাউজুবিল্লাহ)

 আল্লাহ যার হয়ে যাবে দুনিয়াতে তার আর কিছুর প্রয়োজন নেই যা প্রয়োজন আল্লাহ নিজেই পূরণ করে দিবেন।


••• তোর মুখে ফুল চন্দন পড়ুক।

 (ফুল চন্দন হিন্দুদের পূজা করার সামগ্রী)।

 প্রত্যেকটা কথা বলার সময় আগে চিন্তা করতে হবে, আমি কি বলছি, কেন বলছি, আমার এই কথার উত্তর কি.!


•••  কষ্ট করলে কেষ্ট মেলে। 

(কেষ্ট হিন্দু দেবির নাম, তাকে পাবার জন্য কষ্ট করছেন?)

 এ বাক্যটি হিন্দুদের জন্য ঠিক আছে, কিন্তু আপনি একজন মুসলমান হয়ে এ বাক্য কিভাবে ব্যবহার করবেন, আপনার ধর্মে তো কারো জন্য এমন কষ্ট করার কোন প্রয়োজন নেই, আপনার ধর্ম আপনাকে শিখিয়েছে এক প্রভুর কাছে চাওয়া, তার দিদার লাভ করার জন্য মেহনত করা, ও অবশেষে জান্নাতের সুসংবাদ।


••• মহাভারত কি অশুদ্ধ হয়ে গেলো?

(মহাভারত একটি উপন্যাস, যা সবসময় অশুদ্ধ)।


••• মোল্লার দৌড় মসজিদ পর্যন্ত।

(এটি ইসলামের নামে কটুক্তি করা

নাউজুবিল্লাহ )।

 এটা আমাদের মুসলমানরাও অনেকে ব্যবহার করে আর এটা আমি খুব কাছ থেকেই শুনেছি..! আমাদের খুব আশেপাশে মানুষরাই ব্যবহার করে, এমনকি আমরা নিজেরাও অনেক সময় ব্যবহার করি, কিছুটা এমন হয়ে গেছে এই বাক্যটা কথায় আছে না পাগল কাকে বকা দেয় সে নিজেও জানে না - তদ্রূপ আমরা কিছু মুসলমান ও নিজেরাই নিজেদেরকে গালিগালাজ করছি সুস্থ মস্তিষ্ক নিয়ে যেসব বাক্য আদৌ আমাদের জন্য ব্যবহার করা ঠিক না।


•••  লক্ষী ছেলে, লক্ষী মেয়ে লক্ষী স্ত্রী বলা। (হিন্দুদের দেব-দেবির নাম লক্ষী তাই ইসলামে এটি হারাম)।

এ ধরনের কথা — যেমন **"তুমি আমার লক্ষী বউ", "তুমি আমার ঘরের লক্ষী"** — আদর করে বলা হয় ভালোবাসা প্রকাশ করতে। কিন্তু এখানে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো:

“লক্ষী” শব্দের অর্থ কী?

বাংলা ভাষায় “লক্ষী” শব্দটি সাধারণত বোঝায়:

 -- সৌভাগ্যবতী,

-- সংসারে সুখ ও শান্তি আনা নারী।

কিন্তু একই শব্দ হিন্দু ধর্মে একটি দেবীর নাম— "লক্ষ্মী দেবী"

 যাকে সম্পদ ও সৌভাগ্যের দেবী হিসেবে পূজা করা হয়। 

এ কারণে এই শব্দটি মুসলমানদের জন্য আকীদাহর দিক থেকে একেবারেই অযৌক্তিক যা কখনোই বলা ঠিক না।

••• যদি কেউ "লক্ষী" শব্দটি ব্যবহার করে *আক্ষরিকভাবে হিন্দু দেবীর নামে..,

 তাহলে এটি হারাম ও শিরকি কুফরি কথা হয়ে যেতে পারে — 

বিশেষত যদি বিশ্বাস থাকে যে এই "লক্ষী" কোন সৌভাগ্য এনে দেয়।

 তবে যদি কেউ শুধু বাংলা রীতি অনুযায়ী 

“ভালো স্ত্রী” বা “সুখের প্রতীক” বুঝাতে গিয়ে কারোকে ডেকে  থাকে কোনো ধর্ম মনে না রেখে, তাহলে এটি ও নিয়ত অনুযায়ী বিচার হবে। 

কিন্তু তা সত্ত্বেও, এ শব্দটি সন্দেহপূর্ণ (مشتبه) হওয়ার কারণ এ বর্জন করাই উত্তম আমাদের মুসলিমদের জন্য।

অতএব, মুসলিম ভাই বোনরা এই নামে ধরেকারো ভালোবেসে ও ডাকা থেকে বিরত থাকুন। 



 কেউ কারোকে আদর বা ভালোবেসে করে এরকম বলতে পারেন যেমন :--

• তুমি আমার সুখের সাথী.!

• তুমি আমার আনন্দের চাঁন.!

• তুমি আমার আল্লাহর নেয়ামত.!


• নবী ﷺ আয়েশা (রা.)-কে আদর করে বলতেন:

 **"يا عائش"** — সংক্ষিপ্ত করে ভালোবাসার নামে ডাকতেন।

• ভালোবাসা প্রকাশ করতে ইসলামি শব্দ বা নিরপেক্ষ ভালোবাসার ভাষা ব্যবহার করাই উত্তম।

শিরকি, কুফরি কিংবা মুশরিকদের কালচার ও ভাষা পরিহার করাই তাকওয়ার কাজ আমাদের জন্য।


••• কোন ওষুধকে জীবন রক্ষাকারী বলা।

 (জন্ম-মৃত্যু একমাত্র আল্লাহর হাতে)।


•••  দুনিয়াতে কাউকে শাহেনশাহ বলা।

(এর অর্থ রাজাদের রাজাধীকার)। যা কোন মানুষের পক্ষে কখনো সম্ভব না একমাত্র আল্লাহ ব্যতীত।


••• নির্মল চরিত্র বোঝাতে ধোয়া তুলসি পাতা বলা (এটি অনইসলামিক পরিভাষা যা হারাম)।


••• বিসমিল্লায় গলদ বলা।

(এটি সরাসরি কুফরি)।


•••  মৃত্যুর সাথে পান্জালড়া বলা

(কুফরি বাক্য, তাই সাবধান)। মৃত্যুর সাথে কখনোই কেউ পাঞ্জালড়তে পারবে না, যখন যার মৃত্যুর সময় হবে তার থেকে এক্স সেকেন্ড দেরিও হবে না তার মৃত্যু হতে।


••• মধ্যযুগ বর্বরতা বলা

(মধ্যযুগ ছিল ইসলামের স্বর্ণযুগ)। আর সে যুগ কিভাবে বর্বরতার যুগ হয়, মানুষ জ্ঞান শূন্যতার কারণে মানুষ কতটা নিচে নামতে পারে আর কতটা অযৌক্তিক কথা বলতে পারে।


•••  মন ঠিক থাকলে পর্দা লাগে না

( ইসলাম ধ্বংসকারি মতবাদ)। এটা এমন একটা বাক্য যা একটা পর্দাশীল মহিলাকে একটা পতিতালয় পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারে, শুধু এই একটা বাক্য যদি সে মানতে যায়।


••• নামাজ না পড়লেও ঈমান ঠিক আছে বলা। (ইসলাম থেকে বের করার মূলনীতি)। এ কথার উদাহরণ দিয়ে শত শত মুসলমান পীর ধরে নামাজ বাদ দেয় আবার সে উদাহরণও দেয়, 

অথচ ইসলামের মূল ভিত্তি হল পাঁচটি জিনিসের উপর। যেখানে সালাত শব্দটাও রয়েছে অর্থাৎ নামাজের কথা।


তাই মুসলিম ভাই বোনেরা যখন কথা বলবেন খুব সাবধানে কথা বলবেন, আপনার আশেপাশে বা আপনার পরিবারে বা আপনার সন্তান-সন্ততিরা আপনাদের কাছ থেকেই কথা শিখবে, বা ছোট বাচ্চারা অনেক সময় বাহির থেকে এসে কারো কাছ থেকে শুনে হলেও কিছু বাক্য যেটা ঠিক না সেটা তারা ব্যবহার করে থাকতে পারে, তখন পরিবারের বড়দের দায়িত্ব তাদেরকে বুঝানো তাদের ব্যবহারিত শব্দটার অর্থ কি সেটা কারা ব্যবহার করবে, আপনার ধর্ম অনুযায়ী এই কথাটার অর্থ কি হতে পারে, আমরা চাইলে এভাবেই আমাদের পরিবার থেকে শুরু করে সকল স্তরের কুসংস্কার গুলো বাদ দিতে পারব ইনশাআল্লাহ।

  মুসলমানদের জন্য এসব কথা ভুলেও মুখে আনা উচিত না, তাই মুসলমানদের প্রত্যেকটা কথাই হতে হবে হেদায়েত পূর্ণ, যা নিজের জন্য নিজের পরিবারের জন্য নিজের সমাজের জন্য উপকারী কথা হয়, এমন কথা সর্বদা মুসলমানরা ব্যবহার করা।


আল্লাহ তা'য়ালা আমাদের সঠিক বুঝদান করুন।

আর সকলকে আল্লাহ তাঁয়ালা হিদায়াতের উপরে অটল রাখুন..!আমীন 









Comments