সময় গতিশীল সে কোথায় ও স্থির হয় না. তাই সময়ের কাজ সময়ে করা।



স্ত্রী হলো আমাদের ঘরের 'দ্বীনের খুঁটি তাকে সব সময় স্ত্রীর প্রতি সম্মান শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা দেখাতে হবে, স্ত্রীকে কেন্দ্র করেই একটা ঘরের দিন চর্চা শুরু হয়, একজন স্ত্রী পারে তারপর পরিবারকে দ্বীনের দিকে নিয়ে আসতে, স্বামীকে পারে দ্বীনদারের হতে সাহায্য করতে, মাকে পারে নামাজের জন্য উৎসাহিত করতে, বাবাকে পারে সম্মানের সহিত বুঝাতে, ভাইকে পারে শ্রদ্ধার সাথে  আদেশ করতে।

 আর একটা পরিবারকে দিনের দিকে আনতে হলে  স্বামী-স্ত্রী উভয়ই আমলের প্রতিযোগিতা করতে হবে, কারণ মানুষ দেখা জিনিসকে খুব সহজে আয়াত্ত করতে পারে, বাবার আমল দেখেই বাচ্চারা আমলদার হয়, কারণ ছোট বাচ্চারা প্রথমে তার মা বাবার আচার-আচরণ ও আমল আখলাম দেখেই সে বড় হয়।

আর পরিবারে ছোট বাচ্চা হলো আল্লাহ তাঁয়ালার নিয়ামত। ও আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লার পক্ষ থেকে পাওয়া আমানত। 


•••  আমাদের প্রত্যেকের ঘরগুলো এমন করে নেওয়া উচিত যে ঘরের প্রত্যেকের প্রত্যেকের থেকে আমলের দিকে এগিয়ে থাকার চেষ্টা করা ঘরের প্রত্যেককে দেখলে যেন মনে হয় তারা আমলের ক্ষেত্রে একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী অর্থাৎ কে কার থেকে আমলে এগিয়ে থাকতে পারে এমন চিন্তা চেতনা নিয়ে তাদেরকে গড়ে উঠানো।

 প্রতিদিন মসজিদের সবার আগে যাওয়ার চেষ্টা করা, আগে গিয়ে কিছু এক্সট্রা নামাজ পড়ার মত চিন্তা নিয়ে মসজিদে প্রবেশ করা।

 সামনের কাতারে দাঁড়ানোর জন্য একটা প্রতিযোগিতা কাজ করা নিজের মাঝে, নামাজের পরে তেলাওয়াতটা ঠিক থাকা, সুন্নত ও নফল নামাজের প্রতি মনোযোগী হওয়া, কিন্তু বর্তমানে দেখা যায় সম্পূর্ণ বিপরীত, অনেক পরিবার থেকে তো বাচ্চারা মসজিদে নামাজ পড়তে যায় না, বরঞ্চ জুম্মার দিন যদিও অনেকে যায় কিন্তু এমন সময় যায় যখন নামাজ শুরু হয়ে যায়, তাড়াহুড়া করা যায় আবার নামাজ শেষে তাড়াহুড়ো করে চলে আসে, কোথায় দোয়া পড়া আর কোথায়তাজবিহ সুন্নাত কোথায় কি..! কিছুই তারা পালন করার চেষ্টা করে না। 

 কে কত বেশি সুন্নাহ'র উপর অটল থেকে আমল করতে পারে বা কে কার থেকে বেশি কুরআন খতম করতে পারে।  সহজ সহজ সুন্নাত গুলো   কার থেকে কে বেশি পালন করতে পারি, যেমন সলাতের পূর্বে মেসওয়াক ভালোভাবে অজু করে তাহিইয়াতুল অয়ুর ২রাকরা  নামাজ পড়া, বেশি বেশি সালাম  দেওয়ার চেষ্টা করা, ইসরাকে নামাজ,চাশতের নামাজ ও আওয়াবিল নামাজ পড়ার আগ্রহী বাড়িয়ে দেওয়া। দিনে শেষে হিসাব করা কে কতোবেশি আমল এ দিন কাটাতে পেরেছি কার দিনে একবারও নামাজ কাজা হয়নি ও পর্দা ছুটে যায়নি। ছেলে হলে চোখের পর্দা আর মেয়ে হলে শারয়ী পর্দা। 

নিজের জ্ঞানকে কখনো চুপ থাকতে না দেওয়ার আমল এর মাঝে সব সব ব্যস্ত রাখা নিজেকে, (খাওয়া,ঘুমানো,বাথরুম,সফর) ইত্যাদি আদব জেনে তারপর এগুলোকে আমল এর মধ্যে রাখা।

ভালো ভালো লিখকদের বই পড়া নিজের  জ্ঞানকে আরো প্রসারিত করার জন্য, এবং সেই জ্ঞান অনুযায়ী আরো ভালো চর্চা করার জন্য উপকারী ইলম অর্জনের জন্যে কয় পাতা বই পড়েছে সেটার হিসাব করা দিন শেষে । 

দিন শেষে নতুন কী কী আমল করেছে বা শিখেছে। কে কার থেকে বেশি পারিবারিক কাজে  পরিবারকে হেল্প করেছে বা আশেপাশে মানুষদেরকে সাহায্য করেছে  বা সমাজের কোনো কাজে সাহায্য করতে পেরেছে। এসব কাজের মাধ্যমেও নিয়ত ঠিক থাকলে আল্লাহ তাকে অবশ্যই এর প্রতিদান দিবেন।

 আমাদের নিজেদের ধর্মও ধর্মের সকল কালচার নীতিমালা ও নৈতিকতা এগুলো সব সময় পরিবার থেকেই শিখা হয় বাচ্চাদের বা পরিবারের সকলের কোন প্রতিষ্ঠান বা কোন শিক্ষক বা স্কুল কলেজ মানুষকে তার ধর্ম শিখাতে পারেনা তবে হা জানাতে পারে, আর একটা পরিবার পারে একটা সন্তান বা শিশুকে তার নিজের ধর্মকে তার আদর্শ গড়ে তুলতে।

 যেমন ইসলামের প্রত্যেকটানবী রাসূলদের ঘটনা বা সাহাবাদের জীবনী সম্পর্কে আগে নিজে ভালো করে জানা এবং পরিবারে তালিমের মতো করে বাচ্চাদেরকে জানানো, এবং তাদের প্রত্যেককে উৎসাহিত করা নবী রাসূল বা সাহাবাদের মত তাদেরও জীবন গড়তে হবে। আর মাঝে মাঝে তাদেরকে জিজ্ঞাসা করা, কে কোন সাহাবী বা কোন সাহাবা এদের মত হতে চাই, কে কার জীবনে কোন সাহাবীর আদর্শকে ধরে রাখতে চাই, কারণ প্রত্যেকটা সাহাবা বা নবী রাসূলদের জীবনের এক একটা চমৎকার আদর্শ বা সন্দর বাস্তব কাহিনী আছে, যা প্রতিটা বাচ্চাই চাইলে গ্রহণ করতে পারেন আর এই গ্রহণ করার উৎসাহটা প্রত্যেকটা পরিবার থেকেই দিতে হবে।

সবকিছু যদি অন্যের উপর বা মাদ্রাসার উপর ছেড়ে দিয়ে আফসোস করে বলেন..,

আহা! দুনিয়াটার কি পরিবর্তন হয়ে গেল! প্রজন্মের ছেলেমেয়েগুলো বখাটে/নষ্ট/ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে! কেউ দেখার নাই! ইত্যাদি। তাহলে এই হাই হতাশ হবে নিছক বোকামি  ছাড়া আর কিছু না কারণ এই নষ্টের দাই দিনশেষে একটা পরিবারকে বহন করতে হবে,

 ••• আমাদের প্রতিটা পরিবারে  নবী-রাসূলদের ইতিহাস ও ইসলামকে জয় করা পর্যন্ত তাদের কতটা শ্রম ও কষ্ট ছিল ইসলাম প্রচারের ব্যাপারে ও সে ধর্মকে বাস্তবে রূপ দিতে, কতটা কষ্ট করতে হয়েছে তাদের আমলকে ধরে রাখার ব্যাপারে, কতটা কষ্ট স্বীকার করে তাদেরকে সালাত আদায় করতে হয়েছে, এখনকার সময়ের মতো এত সাহস ছিল না সবকিছু, তখন যেমন জানাটাও ছিল অনেক কঠিন আবার নিজে একটা বিষয় জানে সেটাকে অন্যকে জানানো টাও ছিল অনেক বেশি কঠিন, আমাদের মত এত কাছে তারা পানি পাই নাই.! ওযু করার পানির জন্য ও তারা অনেক দূর পর্যন্ত গিয়েও অনেক কষ্ট স্বীকার করার পর তারা অজু বাদ দিয়ে তাইয়াম্মুম করে  সালাত আদায় করছে,

যদিও তাইয়াম্মুম করতে পারার কিছু শর্ত রয়েছে, সকল শর্ত পাওয়া যাওয়ার পরেই কিন্তু কোনো মুসলমানের জন্য অজু বাদ দিয়ে তায়াম্মুম করতে পারবেন, একটা শর্তেও যদি কম পাওয়া যায় তাহলে ও তার জন্য তায়াম্মুম হবে না।

 একটা শর্ত কম হলেও তাকে পানি দিয়ে ওযু করতে হবে, আর বর্তমানে আমাদের ঘরে ঘরে পানির ব্যবস্থা আছে আলহামদুলিল্লাহ.., দুঃখজনক হলেও এটাই সত্যি যে,এত সুযোগ-সুবিধা থাকা সত্ত্বেও আমরা নামাজের প্রতি অনেকে অনেক অমনোযোগী। 

আমরা আমাদের পরিবারগুলোতে এসব বিষয়ে আলোচনা করব বেশি বেশি ও সাহাবিদের গল্প আর বীরত্বের ইতিহাস নিয়ে ঈর্ষাকাতর হয়ে ছোট থেকে প্রতিটা সন্তান ও ভাই-বোনদের মধ্যে ঝগড়া হওয়া উচিত ছিল। 

কেউ বলবে, আমি উসমান (রা:) মত দানবীর হতে চাই। আরেকজন বলবে, তুমি না, আমিই উসমান (রা:)মত দানবীর হতে চাই। 

আরেকজন বলবে, আরে আমি আবু বকরের মতো " সিদ্দিক হতে চাই"। সাথে সাথে আরেকজন বলবে, আরে আমি উমরের মত "রাষ্ট্রপ্রধান" হতে চাই। 

 একজন বলবেন আমি দ্বিনের ব্যাপারে সব সময় নিজেকে পুতপবিত্র রাখবো ইউসুফ আলাইহিস সালাম এর মতো কোন বিষয়ে নিজের উপর জুলুম হলেও আল্লাহ তাআলার ফায়সালার অপেক্ষা করব।

 আরেকজন বলবে আমি আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুর মতো সারাক্ষণ হাদিসের আশে পাশে থাকতে চাই,

 অন্য একজন বলবে আমি  ইসলামের বিপক্ষে মানুষদের উপর ওমর রাযিআল্লাহু তা'আলা আনহু এর অনুরোধ সিংহের মতো রাগান্বিত হতে চাই.! যদি তারা ইসলাম বিরোধী কিছু করতে চাই।

 অপরজন বলবে আমি আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মত, শান্ত ও মৃদু-ভাষী হতে চাই ইসলামকে সকলের কাছে প্রচার করার ব্যাপারে।

••• অপর দিকে একজন বোনটা বলবে, আমি আম্মাজান আয়িশার মত হব। অনেক বড় মুহাদ্দিসা হব। আরেকজন বলবে, আমি আম্মাজান খাদিজার মত হব। নিজের সব কিছু ইসলামের জন্যে বিলিয়ে দিব। অপরজন বলবে  আমি আছিয়ার রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর মত হব, দ্বীনদার কোনো পরিবেশ না পেলেও আমি আমার দিনকে প্রচার করার চেষ্টা করব হাজারো কষ্ট সত্বেও।

 অপরজন বলবে আমি ফাতেমার রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর মত হব কখনো স্বামীর উপর অসন্তুষ্ট হবো না আর্থিক স্বচ্ছলতা না থাকলেও যদি দিন থাকে তার মাঝে এটাই আমার জন্য যথেষ্ট আমি মনে করব।

 একজন বলবে আমি মারিয়াম আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মত পুতপবিত্র নারী হবো। এভাবেই আমাদের পরিবারগুলোকে ইসলামিক চিন্তা চেতনায় গড়ে তুলতে হবে, যদি পরিবার থেকে এসব শিক্ষা দেওয়া না হয় তাহলে তারা বিধর্মীদের কালচার নিজেদের ধর্মের মধ্যে ঢুকিয়ে ফেলবে, এবং তারা এটাকেই তাদের কালচারে রূপ দেওয়ার চেষ্টা করবে।


*** বর্তমানে আমাদের সমাজে অনেক পরিবার রয়েছে যারা নিজেরাও ভালো করে ইসলাম সম্পর্কে জানে না, জানেনা ইসলামের সকল সুন্দর নীতি নৈতিকতার কথা, ইসলাম কত সুন্দর জীবন ব্যবস্থা, যা সুন্দর রাখতে পারে একটা পরিবার একটা সমাজ ও একটা জাতিকে, যে ধর্মে নাই কোন ভেদাভেদ, যে ধর্মে কোন কিছু নেই অসম্পূর্ণ, পৃথিবীতে চলতে গেলে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সকল ভিদিই নিষে খুব সুন্দর ভাবে বিবরণ দেওয়া আছে যা পৃথিবীতে ইসলাম ধর্ম ছাড়া আর কোন ধর্মে নাই।

 অনেক পরিবারে তো ছোটরা যদি কোন গল্প কাহিনী বলতে বলে হাতি আর কচ্ছপ বিড়ালের কাহিনী বলে তাদেরকে ঘুম পারানো হয়, কিন্তু এটা তো ইসলাম না, গল্প কাহিনী যদি শোনাতেই হয় তাহলে বিড়াল কচ্ছপ হাতির গল্প কেন শোনাতে হবে ..? খুব সুন্দর সুন্দর ইতিহাস রয়েছে ইসলাম ধর্মে, শোনাতেই হয় তাহলে নবীতে রাসুলদের জীবনী শুনান, প্রত্যেকটা সাহাবার জীবনী আগে নিজে পড়েন তারপর বাচ্চাদেরকে শোনান, কুরআনে অনেক সুন্দর সুন্দর কাহিনী রয়েছে, শোনাতে হলে ওগুলা শোনান! কারণ নবী রাসূলদের জীবনী শুনানোর মাধ্যমে তাদেরকে ইসলামের আরো অনেক বিষয় সম্পর্কে জানার জন্য আগ্রহী করে তোলা।

এভাবে হতে পারে একটি সমাজ সুন্দর ও শৃঙ্খলাবদ্ধ..!


••• পরিশেষে একটাই কথা_

আল্লাহর নির্ধারিত সময় যখন চলে আসবে তখন তা আর পেছানো হবেনা। তোমরা যদি তা জানতে।

(সূরা আন নূহ -৪)

•• একদিন আমরা সবাই ঠিকই বুঝবো ঘুমের চেয়ে আমাদের জন্য কতোটা  উত্তম ছিল নামাজ, কিন্তু আমারা ঘুমিয়ে ছিলাম। 

 •• প্রতিদিন কোরআন শরীফ তেলাওয়াত করা আমাদের জন্য কতটা প্রশান্তির ছিল কিন্তু তখন আমরা তা পরিত্যাগ করেছিলাম।

••  যিকির-আযকারে আমাদের দিনের বারাকাহ বৃদ্ধি করতে পারতো, কিন্তু আমরা তখন অলসতা করে তা ছেড়ে দিয়েছিলাম।

•• একদিন বুঝবো ইস্তিগফার আমাদের রিজিক এর কতটা প্রশস্ত করতে দিতে পারতো, কিন্তু তবুও তআমরা এ বেপারে গাফেল ছিলাম।

•• কিয়ামুল লাইল আমাদের অন্তরে সুকুন জাগানোর কথা ছিলো কিন্তু আমরা তা থেকে দূরে ছিলাম 

••একদিন সবাই জানবে তাওবার দরজা সদাসর্বদা উন্মুক্ত ছিলো, কিন্তু আমরা নিজেরাই বিলম্ব করেছি।

আল্লাহ তাওফিক দান করুণ ভালোভাবে আমল করার.. আমীন 




Comments