Featured

আপনি যাকে বিয়ে করছেন তার সাথে আপনার কুফু মিলছে তো..?



 কুফু মিলিয়ে বিবাহ করুন..

আর কুফু কি এটা নিয়ে  আমাদের অবশ্যই প্রত্যেক ব্যক্তির জানা উচিৎ।

কারণ বর্তমানে অধিকাংশ বিবাহ বিচ্ছেদ হচ্ছে কুফু না মিলার কারণে..!এই বিষয় টা অনেক এ মানতে চাই আবার অনেক মানতে চাই না, কেউ তো বিয়ের ক্ষেত্রে যে বা জানেই না  

আসুন জেনে নেই কুফু কী?

 কুফু(كُفُو) কি??

বিয়ের ক্ষেত্রে “কুফু” একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। 

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«قال رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم تَخَيَّرُوا لِنُطَفِكُمْ وَانْكِحُوا الْأَكْفَاءَ وَأَنْكِحُوا إِلَيْهِمْ»

“তোমরা ভবিষ্যত বংশধরদের স্বার্থে উত্তম নারী গ্রহণ করো এবং 'কুফু' বিবেচনায় বিবাহ করো, আর বিবাহ দিতেও 'কুফুর' প্রতি লক্ষ্য রাখো।” 

●“কুফু”(كُفُو) একটি আরবী শব্দ; যার অর্থ সমান,সমতুল্য,সমতা,সমকক্ষ।

ইসলামী পরিভাষায় বর-কনের দ্বীন-দুনিয়ার যাবতীয় কিছুতে সমান সমান বা কাছাকাছি হওয়াকে “কুফু” বলে।

●বিয়ের ক্ষেত্রে “কুফু” কেন গুরুত্বপূর্ণ আসুন একটি উদাহরণ দেখি আমরা,

 মনে করুন,  একটি দ্বীনদার মেয়ে এবং  একটি বেদ্বীন ছেলে। 

তাঁদের বিয়ে হলো একজন দ্বীনদার,অপরজন বেদ্বীন; দুজনের মধ্যে প্রথমত কুফু নেই। তারপরেও দুজনের বিয়ে হলো, মেয়েটি যেহেতু দ্বীনদার তাই সে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তার দ্বীনকে টেনে আনে, চায় প্রতিটি ক্ষেত্রে দ্বীনের ছাপ থাকুক।

অপরপক্ষে বেদ্বীন ছেলেটি চাইবে দুনিয়ার স্রোতে গা ভাসিয়ে দিতে, চাইবে সবকিছুই হোক দ্বীনের বাঁধনমুক্ত। দদ্বীনের কিছু কিছু কথা তার ভালো রাখলেও কিছু কিছু বিষয় তার খুব জটিল মনে হবে, তার কাছে মনে হবে সবকিছুতে কেন দ্বীনকে টেনে আনতে হবে.? এভাবেই দুজনের মত দুই রকম হওয়ার কারণে অনেক ক্ষেত্রে অশান্তির সৃষ্টি হবে।

 এমনকি অনেক পরিবারে পর্দার বিষয়টা নিয়েও খুব ঝামেলা হয়, ছেলে তার বন্ধু বা তার দূর সম্পর্কে আত্মীয়-স্বজনকে বাসায় নিয়ে আসে, ছেলে আশা করে তার বউয়ে তাদেরকে খাবার স্রাব করবে, আর বউ যেহেতু তার ধর্মকে জীবনের প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে চায় তাই সে সাধারণত তার দূর সম্পর্কে আত্মীয় বা বন্ধুদের সামনে কখনো যাওয়ার চেষ্টা করবে না আর স্বামী এটাকে খুব সহজভাবে দেখবে এভাবেই পরিবারগুলোতে শুরু হয় অশান্তি । শেষ পরিণতি 'তালাক'।

এবার আরেকটি উদাহরণ দেখি:মনে করুন, আপনার মাসিক আয় দশ হাজার টাকা। আর আপনি এমন কাউকে বিয়ে করলেন যার বাবার মাসিক আয় ছিল পঞ্চাশ হাজার টাকা। অর্থনৈতিক অবস্থানে 'কুফু' নেই। কি মনে হয় সুখে থাকবেন? নাহ।

হাতি-ওয়ালার সাথে বন্ধুত্ব করলে হাতি রাখার মত ঘর নিজেকে বানাতে হবে। অতএব, আপনার রোজগার দশ হাজার টাকা হলে আপনার বিয়ে করা উচিত এমন কাউকে যে এরমধ্যেই মানিয়ে চলতে পারবে। নয়তো বিয়ের পর শুনতে হতে পারে, ‘ভুল করেছি তোমায় বিয়ে করে, দাও এবার আমার হাতটি ছেড়ে ’।

তাই সর্বদিক দিয়ে নিজের চলাফেরা, পোশাক আশাক, বাড়িঘর, থাকা খাওয়ার মান যেমন, ঠিক সেই সমমানের পাত্রী পছন্দ করা উচিৎ। এতে কেউ কারোর উপর গর্ব প্রকাশ করবেনা, খোঁটা দেবেনা; ভালোবাসার গতিও বাধাগ্রস্ত হবেনা। এককথায় প্রায় সব বিষয়ে 'কুফু' বিবেচনা করেই বিয়ের পিঁড়িতে বসা উচিত। নচেৎ পরবর্তী সময়ে 'ভালোবাসা জানালা দিয়ে পালাতে পারে'।

যদি সবকিছুতেই 'কুফু' মিলে যায় তবে তো ভালো এবং এমন দাম্পত্য হবে চিরসুখের। 

পক্ষান্তরে কিছু না পেলেও যদি শুধুই দুজনের মধ্যেই দ্বীনদারী থাকে তবে এটাই তার জন্য যথেষ্ট।

তবে বিয়ের ক্ষেত্রে বর-কনের রুচি, চাহিদা, বংশ, যোগ্যতা সব কিছু সমান সমান বা কাছাকাছি হওয়াকে ইসলামী পরিভাষায় যেহেতু কুফু বলে তাই এটা আমাদেরকে মেনে জীবন এ চলর পথ খুঁজে নিতে হবে।

স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের রুচি, চাহিদা, অর্থনৈতিক অবস্থান খুব বেশি ভিন্ন হলে সেখানে সুখী দাম্পত্যজীবন প্রতিষ্ঠা কষ্টসাধ্য হয়ে যায়। একজন উচ্চ শ্রেণীর ছেলেমেয়ের চাহিদা-রুচির সাথে একজন দরিদ্র বা মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়ের রুচিবোধের মিল না থাকাটাই স্বাভাবিক। 

আবার একজন দ্বীনদার পাত্রপাত্রীর সাথে একজন ধর্মবিষয়ে উদাসীন পাত্রপাত্রীর জীবনাচার নাও মিলতে পারে। 

দ্বীনদার চাইবে সব কিছুতে ধর্মের ছাপ থাকুক। আর দীনহীন চাইবে সব কিছু ধর্মের আবরণমুক্ত থাকুক। সুতরাং এ দুইয়ের একত্রে বসবাস কখনো শান্তি-সুখের ঠিকানা হতে পারে না।

 তাই পবিত্র কুরআনও বিয়ের ক্ষেত্রে দ্বীনদারিতে সমতা রক্ষার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছে।

••আল্লাহ বলেন, ‘দুশ্চরিত্রা নারী দুশ্চরিত্র পুরুষদের জন্য; দুশ্চরিত্র পুরুষ দুশ্চরিত্রা নারীর জন্য; সচ্চরিত্রা নারী সচ্চরিত্র পুরুষদের জন্য এবং সচ্চরিত্র পুরুষ সচ্চরিত্রা নারীর জন্য উপযুক্ত।’ (সূরা নূর : ২৬)।

•অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘ব্যভিচারী পুরুষ যেন ব্যভিচারিণী বা মুশরিক নারী ছাড়া কাউকে বিয়ে না করে। আবার ব্যভিচারিণী নারী যেন ব্যভিচারী পুরুষ বা মুশরিক পুরুষ ছাড়া কাউকে বিয়ে না করে। মুমিনদের জন্য এ ধরনের চরিত্রের নারী-পুরুষকে হারাম করা হয়েছে।’ (সূরা নূর : ৩)।

•• রাসূল সা:-এর পবিত্র হাদিস শরিফেও ‘কুফু’ সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা পাওয়া যায়। রাসূল সা: ‘কুফু’র বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। রাসূল সা: বলেছেন,‘ তোমরা যে ব্যক্তির দ্বীনদারী ও নৈতিক চরিত্রে সন্তুষ্ট আছ তোমাদের নিকট সে ব্যক্তি বিয়ের প্রস্তাব করলে তবে তার সাথে বিয়ে দাও। তা যদি না কর তাহলে পৃথিবীতে ফিতনা-ফাসাদ ও চরম বিপর্যয় সৃষ্টি হবে।’ (তিরমিজি, হাদিস নং ১০৮৪)। 

তিরমিজি শরিফের আরেকটি হাদিসে উল্লেখ রয়েছে, রাসূল সা: হজরত আলী রা:-কে উদ্দেশ্য করে বলেছেন ‘হে আলী! তিনটি ব্যাপারে দেরি করো না। নামাজ যখন তার ওয়াক্ত আসে, জানাজা যখন উপস্থি হয় এবং যখন তুমি তার উপযুক্ত পাত্র পাও’’

 (তিরমিজি, হাদিস নং ১৭১) । 

আরেক হাদিসে রাসূল সা: বলেছেন, ‘তোমরা ভবিষ্যৎ বংশধরদের স্বার্থে উত্তম মহিলা গ্রহণ করো এবং সমতা (কুফু) বিবেচনায় বিয়ে করো, আর বিয়ে দিতে সমতার প্রতি লক্ষ্য রাখো’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ১৯৬৮)। 

(এক কথায়- স্বামী স্ত্রী দুজনের মধ্যে রুজি রোজগার দিন ইসলাম ব্যাপারে খাওয়া দাওয়া ব্যাপারে কাপড়-চোপড় ঘরবাড়ি ব্যাপারে মনোমালিন্য নিজের ভিতর যেন না আসে। 

এবং কোন ছেলে তার আর্থিক অবস্থার চাইতে বেশি মেয়ের আর্থিক অবস্থা যদি থাকে তাহলে নেগলেট করতে পারে )

আমার এটা হচ্ছে না ওটা হচ্ছে না আমার বাড়িতেই ভালো আমি ছিলাম 

বলবে। (স্বামীর সব কিছুর উপর সন্তুষ্ট যেন থাকতে পারে, অসন্তুষ্ট যেন না হয় )

 দ্বীনদারদের তো সবকিছুই আশ্চর্যের; তারা সর্বাবস্থায় সুখ আলহামদুলিল্লাহি আলা কুল্লি হাল।

শেষ কথা: অনেকে বলতে পারেন কোনো ব্যাপার না বিয়ে করে মেয়েকে দ্বীনদার বানিয়ে নেবো, আসলে এমন খুব কম হয়, কারণ এটা স্রেফ একটি শয়তানের ধোকা, উল্টোও তো হতে পারে দেখা গেল দ্বীনদার বানাতে গিয়ে আপনিই বেদ্বীন হয়ে গেলেন..!কি দরকার এত রিস্ক নেওয়ার? যেখানে বর্তমানে নিজেরাই নিজেদেরকে ভালো রাখতে কতটা কষ্ট হয়ে যাচ্ছে, দ্বীনের প্রত্যেকটা বিষয়ে নিজের মধ্যে ধারণ করতে অনেক ক্ষেত্রে নিজেরাই অক্ষম হয়ে যাচ্ছে, এমন অবস্থায় কিভাবে আশা করা যায় যে অন্যকে ঠিক করতে পারবেন, আর অন্যকে ঠিক করার হলে অনেক মাধ্যম আছে মানুষকে দ্বীন শিখানোর এবং জানানোর সে মাধ্যমগুলোতে আপনি চেষ্টা করেন মানুষকে যাতে হেদায়েতের পথে আনতে পারেন।

আমাদের এই জীবন দুনিয়াতে একটি পরীক্ষাকেন্দ্র, পাশ করার সুযোগও একটিই। তারপরেও রিস্ক?

বরং একটি কাজ করা যেতে পারে বিয়েতে দ্বীনকে কন্সট্যান্ট রেখে [এখানে কোন ডিসকাউন্ট নেই দুঃখিত] অন্যান্য দুনিয়াবি বিষয়গুলি সামান্য হেরফের করে এডজাস্ট করা যেতেই পারে। আসলে সবকিছুই নির্ভর করছে দ্বীনদার কেমন তার ওপরে, যত বেশি দ্বীনদারী থাকবে ততোই বাকিগুলোর গুরুত্ব কমবে। 

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«ليَتَّخذَ أحَدُكُمْ قَلْباً شَاكِراً وَلِسَاناً ذَاكراً وَزَوْجَةً صَالِحَةً تُعينُهُ عَلَى أَمرِ الآخِرَة».

‘‘তোমাদের প্রত্যেকের কৃতজ্ঞ অন্তর ও যিকিরকরি জিহ্বা হওয়া উচিৎ। আর এমন মুমিনা স্ত্রী গ্রহণ করা উচিৎ; যে তার আখেরাতের কাজে সহায়তা করবে।’’ 

আখিরাতের কাজে সহযোগিতা করার জন্য স্বামী-স্ত্রীর কুফু থাকতে হবে। স্ত্রীকে অবশ্যই দ্বীনদারিতে স্বামীর বরাবর বা কাছাকাছি হতেই হবে নচেৎ সে আখিরাতের কাজে সহায়তার থেকে বাধা বেশি দেবে এবং অনেকক্ষেত্রে শরীয়ত বিরোধী কাজ করে আপনাকে জাহান্নামের পথেও টানবে। স্ত্রী যদি বেশি দ্বীনদার হয় তবে স্বামীর ক্ষেত্রেও একই।

   « رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍ وَاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَاماً».       

 তাই বিবাহিত এই দোয়াটা পড়া, আর যারা বিয়ে করে নাই তাদের তো আরো বেশি এই দোয়ার আমল করা, বিয়ে ঠিক হওয়ার আগেই আল্লাহর কাছে ভালো নেককার স্বামী বা স্ত্রী চেযে নেওয়া।কারণ কিছু জিনিস আল্লাহর থেকে চেয়ে নিতে হয় যেমন 

..শারীরিক সুস্থতা, 

..হালাল রিজিক, 

..নিরাপদ বাসস্থান, 

..নেককার জীবনসঙ্গী, 

..নেককার সন্তান, 

..ঈমানের সাথে মৃত্যু! আল্লাহ কবুল করুন আমাদের সকলের জন্যই এগুলো আমীন.!

Comments