Featured

ঈদের দিনটাকে আমরা আমাদের একটা ধর্মী দিন হিসেবে ও যেভাবে উপভোগ করতে পারি.!


 

যেভাবে ঈদের আনন্দ করতেন নবীজি ও সাহাবিরা

আমরা নবী কারিম সা. ও তার সাহাবিদের দেখিনি। দেখিনি তাদের জীবন কেমন ছিল। তবে হাদিসে নববী পড়েছি। জীবনী পড়েছি সাহাবিদের। মুসলিমদের আনন্দের দিন ঈদের দিন। ঈদের বিষয়েও তাদের থেকে শিখেছি অনেক কিছু। এ আনন্দের দিনটি কীভাবে পালন করতে হয়। কীভাবে উদ্‌যাপন করতে হয়। আমরা গল্পে গল্পে সাহাবিদের থেকে শুনেছি নবী (সা.)-এর ঈদ কেমন ছিল। ঈদের আনন্দঘন মুহূর্ত কীভাবে কাটিয়েছেন তারা।

হাদিসে নববীর দিকে তাকালে আমরা দেখি, ঈদের দিনে নবীজি সা. দিনে বের হয়ে দুই রাকাত ঈদের নামাজ আদায় করেছেন।

হাদিসে নববীর দিকে তাকালে আমরা দেখি, ঈদের দিনে নবীজি সা. দিনে বের হয়ে দুই রাকাত ঈদের নামাজ আদায় করেছেন।

প্রতি বছর মুসলমানদের সবচেয়ে আনন্দের দিন হলো ২ঈদের দিন ঈদুল আজহার ও ঈদুল ফিতর। বছর ঘুরে এ আনন্দ আর খুশির দিন আসে। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) ও সাহাবারা তাদের জীবনে দেখিয়েছেন এ দিনের গুরুত্ব কতোটা একজন মসলমানের কাছে।কীভাবে তারা ঈদ পালন করতেন, এবং কীভাবে ঈদের দিন সময় কাটাতেন।

হাদিসে দিকে তাকালে আমরা আরো দেখি, 

ঈদের দিনে নবীজি (সা.) দিনে বের হয়ে দুই রাকাত ঈদের নামাজ আদায় করেছেন।

                                             (বুখারি ৯৮৯)। ঈদের দিন গোসল করার মাধ্যমে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অর্জন করাকেও নবীজি (সা.) গুরুত্ব দিয়েছেন। হজরত ইবনে উমর (রা.) থেকে বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণিত, ‘তিনি ঈদুল ফিতরের দিনে ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে গোসল করতেন’

                             (সুনান বায়হাকি ৫৯২০)।

হজরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত ‘সুন্নাত হলো ঈদগাহে হেঁটে যাওয়া’ 

                  (সুনান আত-তিরমিজি ৫৩৩)। 

পথে যাদের সাথে দেখা হবে, তাদের সালাম দেয়া ও ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করার জন্য যে পথে যাবে সে পথে না ফিরে অন্য পথে ফিরে আসা।

নবী কারিম (সা.) ও সাহাবিদের ঈদ সম্পর্কে জানতে আমাদের কাছে হাদিসের ভাণ্ডার রয়েছে। কত যে হাদিস বর্ণিত হয়েছে। এ হাদিসে নববীর মাধ্যমেই আমরা জানতে পারি কীভাবে তারা ঈদের দিন আনন্দে কাটাতেন।

 হাদিসে বর্ণনা করা হয়েছে, ‘নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের দিনে পথ বিপরীত করতেন’ (বুখারি ৯৮৬)।

 ঈদুল ফিতরের দিনে ঈদের নামাজ আদায়ের পূর্বে খাবার খাওয়া উত্তম। হজরত বুরাইদা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতরের দিনে না খেয়ে বের হতেন না।’

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন ‘আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তার বান্দার ওপর তার প্রদত্ত নিয়ামতের প্রকাশ দেখতে পছন্দ করেন’ (আল জামে ১৮৮৭)। 

ইবনুল কায়্যিম রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন ‘নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুই ঈদেই ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে সর্বোত্তম পোশাক পরিধান করতেন’ (যাদুল মায়াদ)। 

হজরত আবদুল্লাহ বিন সায়েব রাদি. থেকে বর্ণিত ‘আমি নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে ঈদ উদ্যাপন করলাম। যখন তিনি ঈদের নামাজ শেষ করলেন, বললেন আমরা এখন খুতবা দেব। যার ভালো লাগে সে যেন বসে, আর যে চলে যেতে চায় সে যেতে পারে’।

                              (সুনান আবু দাউদ ১১৫৭) 

ঈদের সময় বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজনের খোঁজ-খবর নেয়া ও তাদের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার বিশেষ সুযোগ তৈরি হয়। 

এ সম্পর্কে রসুলুল্লাহু (সা.) বলেছেন, ‘যে আখেরাতে বিশ্বাস করে, সে যেন আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখে’ 

                                 (বুখারি ৬১৩৮)।

মদিনায় নবী করিম (সা.) যেভাবে প্রথম ঈদ উদযাপন করেছেন..!

মদিনায় রসুল (সা.)-এর হিজরতের পর দ্বিতীয় হিজরিতে মুসলমানরা প্রথম ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেন। 

মহানবি (সা.)-এর সঙ্গে এ আনন্দের দিন কাটাতে পেরে মুসলিমরা ছিলো সবচেয়ে বেশি খুশি। রসুল (সা.) মদিনার ঈদের দিন ছোট-বড় সবার আনন্দের প্রতি খেয়াল করতেন। সবার আনন্দে ছিলো রসুল (সা.) তখন দেখতে পেলেন মদিনার এক ছোট শিশু-কিশোরের সঙ্গে মহানবী (সা.) আনন্দ করতেন। শরিয়তে নিষেধ নয়, এমন সব আনন্দ করার অনুমতি দিতেন তিনি। বালিকা বয়সী আয়েশা (রা.)-এর মনের বাসনাও রসুল (সা.) পূরণ করতেন।

মদিনার ইতিহাসে একটি আলোকোজ্জ্বল দিন ছিলো প্রথম ঈদের দিন।

 ঈদের দিন সকাল বেলায় গোটা মদিনা জুড়ে আনন্দ আর খুশির জোয়ার দেখা যাচ্ছিলো। আর এ সব কিছুই আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ঘিরে।

মদিনার প্রত্যেকেই ঈদ উৎসবে নিজ নিজ অনুভূতি ব্যক্ত করছিল। তারা সকলেই চাইত তাদের নিজ নিজ অনুষ্ঠান সম্পর্কে যেনো মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানতে পারেন। নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ভালোবাসা ও সম্মানের খাতিরেই তারা এসব করেছিল।

মহানবী (সা.) ঈদের দিনে গোসল করতেন, সুগন্ধি ব্যবহার করতেন, সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে উত্তম পোশাক পরতেন। ঈদুল ফিতরে কিছু মিষ্টি জাতীয় খাবার খেতেন। 

ঈদের দিনের এক স্মৃতি সম্পর্কে হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ঈদের দিন আবিসিনিয়ার কিছু লোক লাঠি নিয়ে খেলা করছিল। মহানবি (সা.) আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, আয়েশা! তুমি কি লাঠিখেলা দেখতে চাও? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি তখন আমাকে তার পেছনে দাঁড় করান, আমি আমার গাল তার গালের ওপর রেখে লাঠিখেলা দেখতে লাগলাম। তিনি তাদের উৎসাহ দিয়ে বললেন, হে বনি আরফেদা! লাঠি শক্ত করে ধরো। আমি দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে পড়লাম। তিনি তখন বলেন, তোমার দেখা হয়েছে? আমি বললাম, জ্বি না। এরপরে বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত আয়শা রাদিআল্লাহু তাআলা আনহা তৃপ্ত হওয়া পর্যন্ত খেলা দেখান।

উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা (রা.) ঈদের দিনের আরেকটি ঘটনা বর্ণনা করেন ‘রসুলুল্লাহ (সা.) ঈদের দিন আমার ঘরে আগমন করলেন। তখন আমার নিকট দুটি ছোট মেয়ে গান গাচ্ছিলো। বুয়াস যুদ্ধের বীরদের স্মরণে। তারা পেশাদার গায়িকা ছিল না। ইতোমধ্যে আবু বকর (রা.) ঘরে প্রবেশ করে এই বলে আমাকে ধমকাতে লাগলেন, নবীজির ঘরে শয়তানের বাঁশি? রসুলুল্লাহ (সা.) তার কথা শুনে বললেন, ‘মেয়ে দুটিকে গাইতে দাও হে আবু বকর! প্রত্যেক জাতির ঈদ আছে, আর এটি আমাদের ঈদের দিন’                                                   (বুখারি )

Comments